৭৮৬ কোটি থেকে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। পাঁচ দশকের এই পথচলায় একসময়কার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা পাওয়া বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের সামনে উদাহরণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত এক থেকে দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ঈর্ষণীয়। এমনকি করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারিতেও যখন বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির অনেক দেশই খাবি খাচ্ছে, তখনো বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচক গুলোতে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। দেশের অগ্রগামিতার এই চিত্রের এক প্রতিফলন যেন দেশের জাতীয় বাজেট।
স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় বাজেট যেখানে ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার, সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে দেশের ৫০তম বাজেটে এসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৬ লাখ কোটি টাকার সীমানা। সে হিসাবে ৫০ বছরের ব্যবধানে ৭৬৮ গুণ বাড়ছে বাজেটের আকার!
১৯৭২ সালের ৩০ জুন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। প্রথম সেই বাজেটটির আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা করেছেন দেশের ৫০তম বাজেট। আর এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত আছেন।
তাজউদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত প্রথম বাজেটের (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) পর ১৯৮১ সালের ৬ জুন ঘোষণা করা হয় দশম বাজেট। এম সাইফুর রহমান ঘোষিত ওই বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ১২ জুন ১৯৯১-৯২ অর্থবছরের জন্য ২০তম বাজেটও ঘোষণা করেন এম সাইফুর রহমান, বাজেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০০১ সালে শাহ এ এম এস কিবরিয়া ঘোষিত ২০০১-০২ অর্থবছরে দেশের ৩০ম বাজেটের আকার ছিল ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২১ সালে দেশের ৪০তম তথা ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর আজ দেশের ৫০তম বাজেট তথা ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, যার সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
আগের বছরের বাজেটগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের এই সময় পর্যন্ত অর্থাৎ সবশেষ তের বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১১ জুন ২০০৯-১০ অর্থবছরের (দেশের ৩৮তম) ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়। ওই বছরই প্রথম বাজেটের আকার লাখ কোটি টাকার গণ্ডি পার হয়।
এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট চার লাখ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় জাতীয় বাজেট। আজ দেশের ৫০তম বাজেটে এসে সেটি ছয় লাখ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বাজেটের আকার বেড়ে যাওয়ার এই ধারাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১২ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তার অর্থ, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আকার বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে। তবে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, বছর শেষে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে বাজেটের বাড়তি আকার নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেটের বাস্তবায়নের হার কমছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত মান এবং বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে নিছক উচ্চাভিলাষী বাজেট ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না।
১৯৭২ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের তুলনায় এবারের বাজেট পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা বেশি। আগেই বলা হয়েছে, দেশের প্রথম বাজেটটির আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তৃতীয় বাজেটেই সেটি হাজার কোটি টাকার সীমানা অতিক্রম করে। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের সেই বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রথম বাজেটের আকার পেরিয়ে যায় ১০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক। সেবার বাজেট ছিল ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার।
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল। আর ২০০৩-০৪ অর্থবছরে গিয়ে প্রথম বাজেট ছাড়ায় ৫০ হাজার কোটির ঘর। সে বছর বাজেটের আকার ছিল ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থব্ছরে বাজেটের আকার ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা করে। টানা দুই অর্থবছরে একই অঙ্কের বাজেটের আর নজির নেই। এর পরের অর্থবছরেই বাজেট পেরিয়ে যায় লাখ কোটি টাকার সীমা, এখন যা ৬ লাখ কোটি টাকা অতিক্রমের অপেক্ষায়।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে অর্থমন্ত্রী ‘মানুষের জন্য বাজেট’ নামে অভিহিত করেছেন। জানা গেছে, স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা এবারের বাজেট অর্থমন্ত্রী হিসেবে আহম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট, বাংলাদেশের জন্য এটি ৫০তম বাজেট। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৮তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৩তম বাজেট।
এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শাহ এ এসএম কিবরিয়া পাঁচটি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেটের তুলনায় ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
সরকার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ১ হাজার ৫১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে এডিপির আওতায় প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৬টি। এ ছাড়াও স্বায়ত্বশাসিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের সংখ্যা ৮৯টি।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, নতুন বছরের জন্য যে ১০টি মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দিয়ে এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ এই ১০ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ হচ্ছে:-
(০১). স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।
(০২). সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
(০৩). বিদ্যুৎ বিভাগের মোট বরাদ্দ ২৫ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা।
(০৪). বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।
(০৫). রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।
(০৬). স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পেয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
(০৭). মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ পেয়েছে ১১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।
(০৮). সেতু বিভাগে ৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।
(০৯). প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগে ৮ হাজার ২২ কোটি টাকা।
(১০). পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।
সরকার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১০টি গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্নিত করেছে।
এ ১০ খাত হচ্ছে:-
(০১). পরিবহন ও যোগাযোগ। এখাতে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
(০২). বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-বরাদ্দ ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা (এডিপির ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।
(০৩). গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী-বরাদ্দ ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা (এডিপির ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ)।
(০৪). শিক্ষা-বরাদ্দ ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা (এডিপির ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ)।
(০৫). স্বাস্থ্য। এ খাতে বরাদ্দ ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যা মোট এডিপির ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
(০৬). স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বরাদ্দ ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা (এডিপির ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ)।
(০৭). পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি খাতে বরাদ্দ ৮ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা (এডিপির ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ)।
(০৮). কৃষিতে বরাদ্দ ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা (এডিপির ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ)।
(০৯). শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায বরাদ্দ ৪ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা (এডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ)।
(১০). বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা (এডিপির ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।)
সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ও বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মিলিয়ে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর বাবদ আদায় হবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া পাওয়া যাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটের অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাত তিনটি হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। নতুন বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে নতুন বছরের বরাদ্দ তার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাও।
করোনায় বিনিয়োগ কম হয়েছে। মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। জমানো পুজি ভেঙে খেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি। এ কারণে সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান, বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে চায়।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে চলতি অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও করপোরেট করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে না দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত শিল্পের কর কমানো হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
নতুন কোনও মেরুকরণ না হলে এবার বাজেটে অপরিবর্তিত থাকছে বাণিজ্যিক ব্যাংক, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানী এবং তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত মোবাইল কোম্পানির কর হার।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানী করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির কর সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে বলে ধারণা করছে সরকার। পাইকারি ব্যবসায়ী, পণ্য পরিবেশক, ব্যক্তি মালিকানাধীন (প্রোপাইটরশিপ) প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম কর কমানো হচ্ছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। এবারও মুল অর্থনীতিতে যুক্ত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে।
নতুন বাজেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে শুধুই মানুষের জন্য। এখানে আগামী দিনের অর্থনীতি আরও মজুত করতে দিক নির্দেশনা রয়েছে, যা বাজেট প্রস্তবনায় পাওয়া যাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.