৭৫ বছর পর পাকিস্তানের জন্মভিটায় ভারতের রিনা ভার্মা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তান ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান রিনা ভার্মা। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় ভারতে আসা ১৫ বছর বয়সি কিশোরী রিনা এখন ৯০ বছরের বৃদ্ধা।
তার পর কেটে গেছে ৭৫ বছর।  আদি বাড়ির স্মৃতি হাতড়ে বেড়িয়েছেন রিনা। খুব করে চেয়েছেন, মৃত্যুর আগে একবার হলেও আদি ভিটা ঘুরে আসবেন। 
অবশেষে তার সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তিনি ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়ে দেশটির রাওয়ালপিন্ডি শহরে অবস্থিত তার আদি ভিটায় গেছেন। আদি ভিটা দেখার পর রিনার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দেশভাগ ঘিরে বিশেষ করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবপ্রদেশে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় লাখো মানুষ জন্মভিটা ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান।
দেশভাগের কয়েক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানের পাঞ্জাবপ্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি ছাড়ে রিনা ভার্মার পরিবার। ভারতে গিয়ে তিনি কখনো তার জন্মভিটার কথা ভুলতে পারছিলেন না।
২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে একবারের জন্য হলেও আদি ভিটায় যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছিলেন রিনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার এই সাক্ষাৎকার অনেককে আপ্লুত করে।
পরবর্তীকালে ‘ইন্ডিয়া-পাকিস্তান হেরিটেজ ক্লাব’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের কর্মীরা রাওয়ালপিন্ডিতে রিনার আদি বাড়ি খুঁজতে শুরু করেন। শেষে এক নারী সাংবাদিক বাড়িটি খুঁজে পান।
করোনা মহামারির কারণে ভ্রমণসংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে গত বছর পাকিস্তানে যেতে পারেননি রিনা। পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য চলতি বছরের মার্চে ভিসার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু কোনো কারণ উল্লেখ না করেই তার ভিসার আবেদন বাতিল করা হয়। আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তার মন ভেঙে পড়েছিল।
ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথা স্মরণ করে রিনা বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছিলাম। আমি কখনো ভাবিনি, মৃত্যুর আগে শুধু নিজের আদি বাড়ি দেখতে চাওয়া ৯০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। এটি ছিল আমার জন্য অচিন্তনীয় একটা ব্যাপার। তবে এমনটিই ঘটেছিল।’
পরে আবার ভিসার জন্য আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন রিনা। আবেদন করার আগেই তার গল্পটি পাকিস্তানের এক মন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি দ্রুত রিনার আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনকে নির্দেশ দেন। কয়েক দিনের মধ্যেই রিনা পাকিস্তানের ভিসা পেয়ে যান।
ভিসা পাওয়ার পর নতুন সমস্যার মুখে পড়েন রিনা। তখন প্রচণ্ড গরম শুরু হয়ে যায়। এ ছাড়া সম্প্রতি সন্তান হারান তিনি। ফলে তাকে একাই পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ভাবতে হয়। এ অবস্থায় তাকে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়।
রিনার জন্য এই অপেক্ষা ছিল দুঃসহ। কিন্তু তিনি গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাননি। তাই তিনি অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেন।
কয়েক মাস অপেক্ষার পর ১৬ জুলাই ভারতের পুনে থেকে পাকিস্তানে পৌঁছান রিনা। আর ২০ জুলাই তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে নিজের আদি নিবাসে যান। রিনা তার জন্মভিটায় গেলে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
আদি ভিটায় ফিরতে পেরে রিনা বেশ উচ্ছ্বসিত। আনন্দে তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখানে আসতে পেরে খুশি। তবে আমি আজ এখানে একাকী বোধ করছি। (সূত্র: বিবিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.