‘৬ মিনিটের বিপর্যয়’
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার উড্ডয়ন খাতের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। দেশটির ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এই সংক্ষিপ্ত সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিস্তারিত জানিয়েছে।
মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৮১ জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া জেজু এয়ারের ফ্লাইট থেকে মাত্র দুইজন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। বাকি ১৭৯ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪।
ছয় মিনিটের ঘটনাক্রম
জেজু এয়ারের ফ্লাইট ২২১৬ থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে ফিরছিল। উড়ো জাহাজটিতে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ছয়জন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন।
৮:৫৭: কন্ট্রোল টাওয়ার পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগার সতর্কতা জানায়।
৮:৫৮: পাইলটরা ‘মেডে’ সংকেত দেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাখির সঙ্গে ধাক্কায় ল্যান্ডিং গিয়ার অকেজো হয়ে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি চাকা খোলা ছাড়াই অবতরণ করতে চেষ্টা করে।
৯:০০: বিপদ সংকেতের দুই মিনিট পর উড়োজাহাজটি রানওয়ের বিপরীত দিকে অবতরণের অনুমতি নেয়।
৯:০৩: অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়।
পাইলটদের অভিজ্ঞতা এবং দুর্ঘটনার কারণ
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি ছিল বোয়িং নির্মিত। এতে থাকা দুই পাইলটের যৌথভাবে ৮,৪৭৩ ঘণ্টার ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার উড্ডয়ন নীতি পরিচালক জু জং-ওয়ান জানিয়েছেন, মুয়ান বিমানবন্দরের রানওয়ের আকার নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। রানওয়েটি ২,৮০০ মিটার দীর্ঘ, যা আগেও একই ধরনের উড়োজাহাজের অবতরণের জন্য যথেষ্ট ছিল।
তবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বৈরি আবহাওয়া এবং পাখির সঙ্গে সংঘর্ষকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্ধার কার্যক্রম
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহতদের শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
‘উড়োজাহাজটি দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর অনেক আরোহী বাইরে ছিটকে পড়েন, যার ফলে জীবিত থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, ’ বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।
মুয়ান ফায়ার সার্ভিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উড়োজাহাজের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মরদেহ শনাক্ত করতে অনেক সময় লাগছে। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’
ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে, তবে ভয়েস রেকর্ডারের সন্ধান এখনো চলছে। এগুলো দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে, এই ছয় মিনিটের ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এক মর্মান্তিক অধ্যায় রচিত হলো উল্লেখ করে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.