৪৫ কেজিতে মণ কিভাবে? কৃষকদের বঞ্চিত করার প্রাথমিক হিসাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইংরেজিতে ”কনজুমার” শব্দের অর্থ ভোক্তা বা ভোগকারী। অর্থাৎ যারা ভোগ করেন তাদেরকে ভোক্তা বলে। আর এই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের জন্য নির্ধারিত আইনও পৃথিবীর সারা দেশের ন্যায় বাংলাদেশে ও প্রচলিত আছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। একজন ক্রেতা বা বিক্রেতা কোন পন্য ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি জেনে বুঝে নির্ধারিত মূল্য বা ওজনে কম অথবা বেশী নেয় কিংবা নিতে বা দিতে বাধ্য করে তাহলে নিশ্চয় তিনি আইনের চোখে অপরাধী বলে গণ্য হওয়ার কথা। কিন্তু কে শুনছে কার কথা বা কে মানছে আইন?

রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘ দিন যাবৎ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীগণের স্বেছাচারীতা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন বাজারে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান ৪১ কেজিতে, মাছ, বেগুন,মুলা- ৪৫, আম,পেয়ারা- ৪৮ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রয় করেন বিক্রেতাগন। অনান্য পণ্য দ্রব্য যেন যা খুশি তাই যেমন,পান বিক্রেতাদের হ য ব র ল অবস্থা।

তারা বিক্রয় করে একদামে আড়তে যাওয়ার পর আড়ৎদার ইচ্ছামত দাম নির্ধারন করে বিক্রেতাকে পরিশোধ করে। এতে বিক্রেতা যেন অসহায় কিছুই করার নেই তাদের। আর এভাবেই পণ্য দ্রব্যের ধরণ অনুযায়ী তার ওজন নির্ধারণ করেন ব্যবসায়ীরা।

এখন প্রশ্ন হল যারা শিক্ষকতা পেশায় আছে তারা আসলে গনিতে কি শিখাবে? তা হলে কি ব্যবসায়ীদের সাথে তাল মিলিয়ে গনিতও পাল্টে যাবে?  কেননা স্কুলের শিক্ষা তো বাজারে গিয়ে মিলছে না।

আসলে অতীব পরিতাপের বিষয় হলো একজন কৃষক যাকে মানব সভ্যতার উন্নয়নের একমাত্র কান্ডারী বলা হয়, তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল উৎপাদন করছে। শুধু মাত্র তাদেরকেই ঠকানোর জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ীগণ ক্রয় বিক্রয়ের ফাঁদে ফেলে প্রতি মণে ৩ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত পণ্যদ্রব্য শুধুমাত্র হাত বদলের ব্যবধানে বাগিয়ে নিচ্ছে তারা। যেন কেউ তা বুঝেও বুঝতেই পারছেনা। ৪০ কেজির একমণ আম বাজারে বিক্রয়ের জন্য গেলে আপনি দাম পাবেন ৩৫ কেজির। আর যখন তা কিনতে গেলেন এক মণ আম কিনে বাড়িতে ওজন করলে মিলবে ৩৬ থেকে ৩৮ কেজি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন মাছ ব্যাবসায়ী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বললেন, আমি যে দামে মাছ ক্রয় করি সে দামে বিক্রয় করলেও প্রতি মনে আমার লাভ হবে ৫ থেকে ৬শত টাকা।

পান বিক্রির কথা জানতে নরদাশ ই্উনিয়নের কোয়ালীপাড়া গ্রামের পান চাষি এনামুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সে কথা আর বলবেন না, গত হাটে পান নিয়ে গেলে আমার পান চারবার বিক্রয় করতে হয়েছে। প্রথমে আমার পানের দাম মিটমাট হয় ৪২০০ শত টাকা, মহাজনের কাছে গেলে দাম দিতে চায় ৩৮০০ শত টাকা, আমি মনের দুঃখে তা ফেরত আনি দ্বিতীয় বারে আবার বিক্রয় করি ৪০০০ টাকা, এবার মহাজন ৩৭০০শত টাকার বেশি দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয়। এভাবে চার বার বিক্রয়ের পর একই কায়দায় আমাকে ৩৫০০শত টাকা নিতে বাধ্য করে মহাজন ও ক্রেতা গণ। তা ছাড়া তারা পানের গাদি খুলে ফেলে এলামেলো করে দেয়। যাতে করে ঐ পান আর কেও যেন নিতে না চায়। এই ঘটনা পানের হাটে নিত্য দিনের। শুধু তাই নয় হাতা হাতি, ধাক্কা- ধাক্কি, পানের গাদি খুলে ফেলা প্রায় বিক্রেতার সাথে তারা এমন আচরন করে থাকে।

এই অরাজকতা রুখবে কে? কেউ কি নেই এসব অনিয়ম রোধ করার জন্য? সাধারন মানুষের প্রশ্ন এমনই। তাই এসব অনিয়ম দুর করার এখনই উপযুক্ত সময় বলে আমরা সকলেই মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কিছুদিন পর গনিতের সূত্রও পরিবর্তন করতে হতে পারে।

তাছাড়া ব্যবসায়ীরাই যদি ওজন নির্ধারনের ক্ষমতা সংরক্ষন করে থাকেন তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের কি বা প্রয়োজন? আমরা আর কত পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকব? এখন-ই সময় এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। নতুবা এই বৈষম্য দূর করা একসময় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। আমরা যথাযথ কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো যেন বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাজার তদারকির মাধ্যমে এসব পন্যের ওজন মণ প্রতি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় বলেও জানিয়েছেন ভুক্তোভোগীরা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.