২৫০০ ইভিএম কেনা হয়েছে , আরও কেনা হবে : নির্বাচন কমিশন

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছিল। ভোট গ্রহণের এই যন্ত্রটির পক্ষে মত দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা কয়েকটি দল। ইভিএম নিয়ে দুই রকম মত থাকলেও ইসি সাড়া দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের আগ্রহে।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইসি ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া উচিত কি অনুচিত, নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন, ইভিএমের ব্যবহার, নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস—ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাদের সমমনা দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দেয়। বিএনপিসহ বাকি প্রায় সব দলই ছিল ইভিএমের বিপক্ষে। সংলাপের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও বলেছিলেন, সব দল একমত হলেই কেবল ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত তারা ২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম কিনে ফেলেছে, যার ৩৮০টি গত সপ্তাহে তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলো কিছুদিনের মধ্যেই পৌঁছাবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এসব ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করেননি। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বর্তমানে বরিশালে অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএম কেনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ইভিএম আমাদের হাতে এসেছে। বাকিগুলোও এসে যাবে।

ধরে নেওয়া হয়েছিল, ইসি ইভিএমের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবে না। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে তা ঘটেনি। জানা যায়, ইসি এসব ইভিএম কিনেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে। আর বিএমটিএফ অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব ইভিএম আমদানি করেছে ফিনল্যান্ড থেকে। প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএমের দাম পড়েছে ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো। কমিশন সচিবালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, সব মিলিয়ে ১২ হাজার ইভিএম কেনা হতে পারে। সে জন্য ইসিকে ব্যয় করতে হবে ২৪০ কোটি টাকা।

ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে পাঁচ হাজারের মতো ইউপিতে ৪২ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের বুথের সংখ্যা দুই লাখের বেশি। যেহেতু ইউপি নির্বাচন ধাপে ধাপে হয় এবং বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় সব কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহারের উপযোগী নয়, তাই ১২ হাজার ইভিএম কেনার চিন্তাভাবনা করছে।

ইসি সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত ইউনিয়ন পরিষদ ও অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়ে ইভিএম কেনা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, হলেও সেটা কতটা হবে, সে বিষয়ে কমিশন পরে সিদ্ধান্ত নেবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংলাপে খোদ সিইসিই বলেছিলেন, সব দল একমত না হলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। এখন দেখছি তারা যা বলেছিল, তা করছে না। বরং সরকার যা বলছে, তা-ই করছে। সরকারের অনুগত কমিশন হলে যা হয়।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ছয়টি ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ২৬ জুন এই সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভার সব কটি ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এই পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে ২৫ জুলাই।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। তখন ইসি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ১ হাজার ২৩০টি ইভিএম কিনেছিল। কিন্তু রাজশাহী সিটি নির্বাচনসহ আরও কয়েকটি জায়গায় ঠিকমতো কাজ না করায় পরের কমিশন ওই সব ইভিএম ধ্বংস করে ফেলে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.