ঢাকা প্রতিনিধি: আগামী ২৩ নভেম্বর দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এই দিনকে ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বিকালে গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিন বা তারিখ না বললেও নভেম্বর মাসে ফিরবেন এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আপনারা খুব শিগগিরই জানতে পারবেন নির্ধারিত তারিখ। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান দেশে ফিরলে গুলশানের ৭৯ নম্বর ও ১৯৬ নম্বর দুই বাসা মিলিয়ে থাকবেন। তার নিরাপত্তা ইস্যুকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ চলছে।
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির মহাসচিব ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলে আসছেন খুব শিগগিরই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। এই অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল তারেক রহমানের আসার বিষয়ে তথ্য দিলেন।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে আগামী ২৩ নভেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন ধার্য করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগেই দলীয় একক প্রার্থী এবং মিত্ররাজনৈতিক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ৩শ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে চলতি মাসে ২শ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের অনেককেই সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মাঠে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। তার নির্দেশনা অনুযায়ী, যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ধারণা করা যাচ্ছে, খুব শিগগির এই বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক রহমানের দেশের ফেরার আগে তার নিরাপত্তা ইস্যুটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে সরকার – এমন নিশ্চয়তা পেয়েছে বিএনপি। তার নিরাপত্তার স্বার্থে বুলেটপ্রুফ এসইউভি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে দুটি গাড়ি অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী মনে করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তিনি হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক। এই প্রতীককে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমরা তা করব।’
দেশে ফেরার পর তারেক রহমান গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা ও ১৯৬ নম্বর বাসা মিলিয়ে থাকবেন। ফিরোজায় আছেন মা বেগম খালেদা জিয়া। বিচারপতি আবদুস সাত্তার সরকারের সময় দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ১৯৬ নম্বর বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এত বছর বাড়িটি তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নামজারি করা ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন। এই বাড়ির সংস্কারকাজ চলছে।
দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তারেক রহমানের জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যুসহ সব প্রক্রিয়া চলছে। তারেক রহমান বর্তমানে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। আইএলআর স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়; ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করা যায়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১/১১ সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সময় থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকেই তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শক্তির প্রতীক তারেক রহমানকে শেষ করতে দেশি-বিদেশি নানা পক্ষ চক্রান্ত করেছে। তার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। সেই তিনি দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের নেতা হিসেবে। তাকে বরণ করতে দেশের মানুষ দিন গুনছে।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন, এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি তো সেটা একটি বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেই দিয়েছেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যে কোনো আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
২শ আসনে একক প্রার্থীর বাছাই শেষ দিকে
দলের প্রার্থী মনোনয়ন কবে চূড়ান্ত হবে জানতে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এই মাসের (অক্টোবর) মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২শ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো গ্রিন সিগনাল দেব সেই প্রক্রিয়ায় আছি আমরা শেষের দিকে, যেন নির্বাচনী মাঠে একক প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
জোট গঠনে আলোচনা হচ্ছে
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সবার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত জোট কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য আপনাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে জোটবদ্ধ হলেও, কী হবে সেটা রাজনীতির মাঠে আগে থেকেই বলে দেওয়া যায় না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো. রাজু আহমেদ। #

















