২০২৩ সালে বিশ্ব হারিয়েছে যে আলোচিতদের

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। বছরের সঙ্গে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন বিশ্বের আলোচিত ও বিখ্যাত অনেকে। বিশ্বখ্যাত মুভি স্টার, সংগীত শিল্পী, ফুটবলার, ক্রিকেটারসহ অনেক খ্যাতিমানকে আমরা হারিয়েছে। গত বছরে মনে রাখার মতো বিশ্বাঙ্গন থেকে যাদের হারিয়েছি তাদের নিয়ে এই সালতামামি।
ম্যাথু পেরি
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ফ্রেন্ডস-এর তারকা ম্যাথু পেরি (৫৪) আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন ২৯ অক্টোবর। লস অ্যাঞ্জেলেসের এই তারকাকে বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ‘ফ্রেন্ডস’-এর প্রধান ছয় চরিত্রের অন্যতম চ্যান্ডলার বিং হিসেবে দর্শকের মন জয় করেছিলেন এই অভিনেতা। বন্ধুত্ব ও প্রেমের মিশেলে চরিত্রটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
১৯৬৯ সালে ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাথু পেরি, বেড়ে ওঠেন কানাডার অটোয়াতে। সেখানে তিনি কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনাও করেন।
১৯৬৯ সালে ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাথু পেরি, বেড়ে ওঠেন কানাডার অটোয়াতে। সেখানে তিনি কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনাও করেন।

গ্লেন্ডা জ্যাকসন
২০২৩ সালের ১৬ জুন প্রয়াত হয়েছেন অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও সাবেক এমপি গ্লেন্ডা জ্যাকসন (৮৭)। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর লন্ডনের ব্ল্যাকহেথে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয় জীবনে গ্লেন্ডা জ্যাকসন দুটি অস্কার, তিনটি অ্যামি, দুটি বাফটা ও একটি টোনি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে লন্ডনে ‘কনসার্ট ইন সিমপ্যাথি’তে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। কনসার্ট হয়েছিল লন্ডনসহ ব্রিটেনের আটটি শহরে। তবে তখন সবার নজরে ছিল লন্ডনের আয়োজনটি।
ল্যান্স রেডডিক
২৪ মার্চ মুক্তি পায় জনপ্রিয় সিনেমা ‘জন উইক’-এর চতুর্থ কিস্তি। সিনেমা মুক্তির সপ্তাহখানেক আগে ১৮ মার্চ মারা যান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ও গুণী অভিনেতা ল্যান্স রেডডিক (৬০)। লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজে বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় অভিনেতাকে। ল্যান্স রেডডিক জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়্যার’-এ অভিনয়ের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এইচবিওর জনপ্রিয় সিরিজটিতে তিনি অভিনয় করেছেন।
‘জন উইক’ সিনেমায় অপরাধীদের আন্ডারগ্রাউন্ড হাব দ্য কন্টিনেন্টাল হোটেলের অভ্যর্থনাকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে এই অভিনেতা অনেকগুলো সিনেমা ও টিভি সিরিজে অভিনয় করেছেন। তাঁকে ‘লস্ট’, ‘সিএসআই: মিয়ামি’, নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘রেসিডেন্ট ইভিল’, ‘আমেরিকান হরর স্টোরি: কোভেন’, ‘দ্য ব্ল্যাকলিস্ট’, ‘ওয়ান নাইট ইন মিয়ামি’, ‘অ্যাঞ্জেল হ্যাজ ফলেন’ ও ‘গডজিলা বনাম কং’ ইত্যাদি সিনেমায় দেখা গেছে।
‘ওয়ান নাইট ইন মিয়ামি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এই অভিনেতা ২০২১ সালে স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন।

লি সান-কিউন
সম্প্রতি (২৭ ডিসেম্বর) গত হয়েছেন অস্কারজয়ী কোরিয়ান সিনেমা ‘প্যারাসাইট’-এর অভিনেতা লি সান কিউন (৪৮)। ‍সিউলের প্রাণকেন্দ্রের একটি পার্কের পাশে থাকা গাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
অভিনেতার বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে অবৈধ মাদক গ্রহণের অভিযোগে তদন্তে নামে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এই অভিনেতাকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল আদালত। এর মধ্যেই তার মৃত্যু হলো। মাদক–কাণ্ডে লি সান কিয়োনের নাম জড়ানোর পর টিভি সিরিজ ‘নো ওয়ে আউট’ থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি।
মাইকেল গ্যাম্বন
হ্যারি পটারের বিখ্যাত অভিনেতা প্রফেসর অ্যালবাস ডাম্বলডোরখ্যাত স্যার মাইকেল গ্যাম্বন ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি হাসপাতালে মারা যান। হ্যারি পটারের আটটি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছয়টিতে প্রফেসর অ্যালবাস ডাম্বলডোরের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মাইকেল গ্যাম্বন। তার পাঁচ দশকের কর্মজীবনে টিভি, চলচ্চিত্র, থিয়েটার ও রেডিওতে কাজ করেছেন। চারটি বাফতা জিতেছিলেন তিনি।

গ্যাম্বন

হেনরি কিসিঞ্জার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন ৩০ নভেম্বর (১০০)। সর্বশেষ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসনে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন।
তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান— কিসিঞ্জার এসোসিয়েটস এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত এই সাবেক কূটনীতিক কানেক্টিকাটে তার বাড়িতে মারা গেছেন।
কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কখনো কখনো আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিতও হয়েছেন। ১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে পরিবারের সঙ্গে ১৯৩৮ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।
পরে ১৯৪৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এরপর তিনি দেশটির সামরিক বাহিনী ও পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সে কাজ করেন। বাংলাদেশকে তিনি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্তব্য করেছিলেন।

হেনরি

মিলান কুন্দেরা
‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’-এর লেখক ও বিশ্ববিখ্যাত ঔপন্যাসিক মিলান কুন্দেরা মারা গেছেন ১২ জুলাই। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
চরিত্রগত ব্যঙ্গ ও কাব্যিক গদ্যের মাধ্যমে কুন্দেরা ভিন্নমতের জন্য তার চেক জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার নিজের অভিজ্ঞতার ওপর আঁকিয়ে জীবন সম্পর্কে যা কিছু অত্যাবশ্যক এবং অযৌক্তিক তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।
তিনি ‘আর্ট অফ দ্য নভেল’ (১৯৮৬) তে বলেছিলেন, ‘জীবন একটি ফাঁদ যা আমরা সবসময়ই জানি; আমরা না চাইতেই জন্মগ্রহণ করেছি, এমন একটি দেহে আবদ্ধ হয়েছি যা আমরা কখনই বেছে নিইনি ও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করছি।’
কুন্দেরার জন্ম ১ এপ্রিল, ১৯২৯ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ব্রানো শহরে। তার বাবা একজন বিখ্যাত পিয়ানোবাদক ছিলেন। তিনি প্রাগে শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং পরে সেখানেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি ফরাসি কবি অ্যাপোলিনায়ার অনুবাদ ও নিজের কবিতা লেখা শুরু করেন।
মিসরীয় ধনকুবের আল ফায়েদ
প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে নিহত দোদির বাবা মিসরীয় ধনকুবের আল ফায়েদ মারা গেছেন ২ সেপ্টেম্বর। একসময় তিনি লন্ডনের অভিজাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডস কিনে নিয়েছিলেন। তার ছেলে দোদি আল ফায়েদ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন। ডায়ানা ও দোদির ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর এক দিন আগেই তিনি মারা যান।
আল ফায়েদের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ছেলে দোদি ও ডায়ানার মৃত্যুর পেছনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে তাদের হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল ফায়েদের।

 আল ফায়েদ

মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে জন্ম নেওয়া আল ফায়েদের ক্যারিয়ার শুরু হয় ঠান্ডা পানীয় বিক্রি দিয়ে। পরে সেলাই মেশিনের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য ও পরে ইউরোপে তিনি আবাসন, জাহাজ, নির্মাণকাজের ব্যবসা করেন। এভাবেই তিনি নিজের ও পরিবারের ভাগ্য গড়েন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.