বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ইউরোপ থেকে মানবিক সহায়তা নিয়ে সমুদ্রপথে গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে এক বহর নৌযান। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভেঙে গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু শুরু থেকেই যাত্রাপথ রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
আয়োজকদের দাবি, গ্রিস উপকূলে তাদের নৌযানগুলোর ওপর ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে সমুদ্র।
ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০টি জাহাজে মোট ১৩ বার হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত তিনটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কাফেলায় যোগ দেওয়া পোল্যান্ডের সংসদ সদস্য ফ্রানেক স্টারচেভস্কও জানিয়েছেন একই তথ্য।
আরেক জার্মান মানবাধিকারকর্মীর দাবি, অন্তত পাঁচটি নৌযানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। তাদের কথায়, ‘ড্রোন থেকে অজ্ঞাত বস্তু নিক্ষেপ করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, এমনকি উচ্চস্বরে সংগীত বাজিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও ধরা পড়েছে বিস্ফোরণ আর ধোঁয়ার দৃশ্য। রাতের আঁধারে আতঙ্কে দৌড়ঝাঁপ করা মানুষের মাঝেই ধরা পড়ে প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা—‘আমরা থামব না।’ সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আবারও যাত্রা শুরু করে বহরটি।
ফ্লোটিলার সঙ্গে রয়েছেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদরা। তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে এক সুর—গাজার জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছানোই এই অভিযানের একমাত্র লক্ষ্য।
এমন পরিস্থিতিতে ইতালি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো জানিয়েছেন, হামলার পরই ফ্লোটিলায় থাকা ইতালীয় নাগরিকদের সহায়তায় যুদ্ধজাহাজ ফ্রিগেট ফ্যাসান পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ড্রোন হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে ইতালীয় নৌবাহিনী ওই এলাকায় তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করবে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের কাছে তারা ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রিসের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক টহল জাহাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো ক্ষতির প্রমাণ পায়নি। তবে তারা স্বীকার করেছে, ফ্লোটিলার সদস্যরা হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
বারবার হামলার মুখেও থামানো যায়নি কাফেলাটিকে। আয়োজকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আমাদের গন্তব্য গাজা, আর আমরা থামব না।’ সমুদ্রের বুক চিরে এগিয়ে চলা এই ত্রাণবাহী বহর তাই শুধু মানবিক সহায়তার বহর নয়, বরং হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের প্রতীক। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.