হেফাজতের শীর্ষ ৪ নেতা গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুলকে নারীসহ আটকের জেরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুর ও মহাসড়কে নাশকতা সৃষ্টির মামলার প্রধান আসামী সহ দলটির ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১।
আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) সকালে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুর ও মহাসড়কে নাশকতা সৃষ্টির মামলার প্রধান মাওলানা ইকবাল সহ ৪ জনকে গতকাল রবিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১ এর একটি দল। গ্রেপ্তাররা মামলার এজাহার ভুক্ত ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর আসামী।
গ্রেপ্তাররা হলেন: হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল (প্রধান আসামী), মাওলানা মহিউদ্দিন, মাওলানা শাহজাহান শিবলী ও মাওলানা মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাওলানা ইকবাল ও মাওলানা মহিউদ্দিন হেফাজতের বড় নেতা। গ্রেপ্তার ৪ জনকে সোনারগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২টি মামলায় প্রত্যেকের ১৪ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানোর হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে নারীসহ স্থানীয়দের দ্বারা অবরুদ্ধ হন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। সে সময় তিনি ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবী করেন। হেফাজতের এই কেন্দ্রীয় নেতা আটক হওয়ার খবরে লাঠিসোটা হাতে রিসোর্টে এসে ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয় সংগঠনের কর্মীরা।
এরপর তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেন এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কর্মীদের ভাঙচুরের সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফা মুন্নাসহ সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা। এসময় হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা রিসোর্টের বাইরে অবস্থান নেন।
এদিন এক নারীর (জান্নাত আরা ঝর্ণা) সঙ্গে অবস্থান করার সময় অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। ওই দিন তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। যদিও কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। তা ছাড়া রিসোর্টে কথিত স্ত্রী ঝর্ণার সঠিক নাম বলেননি মামুনুল।
মামুনুল হক হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। রয়্যাল রিসোর্টে তিনি ঘেরাও থাকা অবস্থায় স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা।
মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দুই সন্তান আবদুর রহমান ও তামিম তাদের বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকে। আবদুর রহমান কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিচার দাবি করে। পাশাপাশি আবদুর রহমান তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ও তাদের পরিবার ধ্বংসের জন্য সরাসরি মামুনুল হককে দায়ী করে।
এর পর নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের হরতাল কর্মসূচী ও দলটির যুগ্ন-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজত নেতা-কর্মীদের তান্ডব ও সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৩জনকে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মো. আফজাল হোসেন আফজাল  #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.