চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটাসমৃদ্ধ হালদা নদীতে অবশেষে দেখা মিলল ‘সাদা সোনা’ খ্যাত মাছের নিষিক্ত ডিম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চতুর্থ জো’র শেষ ভাগে ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) রাত ২ টার দিকে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে ও সোমবার (২৬ মে) বিকালে নদীতে দুই দফা নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ।
নমুনা ডিম ছাড়ার পর হতে প্রায় ৫ শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী নৌকা, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জামাধি নিয়ে পুরোদমে মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় নদীর পাড়ে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। ডিম সংগ্রহকারীরা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পটে একযোগে উৎসবমুখর পরিবেশ ডিম সংগ্রহে নেমে পড়ে। শুক্রবার দুপুরে জোয়ার আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন।
মাচুয়া গোনা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মো. সোহেল বিটিসি নিউজকে জানান, ৫টি নৌকায় ৩০ বালতি মত নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছে। যা হতে আনুমানিক ৫-৬ কেজি রেনু পাওয়া যাবে। একই এলাকার মো হাসান জানান, তিনি ৬ নৌকায় ২৬ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে। যা হতে প্রায় ৪-৫ কেজি রেনু উৎপাদন হবে।
গহিরার অংকুরিঘোনা এলাকার প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে কষ্ট হলেও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে এতে আমরা খুশি। তিনি বলেন, দুটি নৌকায় ৭/৮ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। দীর্ঘ অপেক্ষাট পর গত বছরের তুলনা এবারের কয়েকগুণ বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পেরে তারা বেশ আনন্দিত।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরীর কো অর্ডিনেটর ও হালদা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে বহুল প্রতীক্ষিত হালদা নদীতে রুই জাতীয় ব্রিড মাছ ডিম ছেড়েছে। নদীর পাড়ের প্রায় ৫৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ২৫০টি নৌকা নিয়ে উৎসব সহকারে ডিম সংগ্রহ করছে। এবছর প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছে। মদুনা ঘাট ছায়ার চর থেকে, রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরিগোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরে অনেক ডিম সংগ্রহকারীরা খুবই খুশি।
অনেকে প্রতি নৌকায় গড়ে ৫/৬ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এখন নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারী এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিমের পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। নদীতে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি যৌথ ভাবে ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ এবং নদীর সার্বিক পরিবেশ মনিটরিং করছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে।পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলো তারা অধিক ডিম সংগ্রহ করেছিলো।
রাউজান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী বিটিসি নিউজকে বলেন, অনুকৃল পরিবেশ থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে হালদা নদীতে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সংগ্রহকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছে। সকল তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে প্রাপ্ত ডিমের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কেজি। প্রায় ২৫০ টি নৌকা ও সাড়ে পাঁচশ ডিম সংগ্রহকারীর প্রচেষ্টায় সফলভাবে ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম সমাপ্ত হল।
বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা গত বছরের চেয়ে ৮-৯ গুণ বেশি ডিম সংগ্রহ করে পেরে বেশ আনন্দিত। তারা সংগৃহীত ডিমগুলো সরকারী হ্যাচারী, ব্যক্তিগত মাটির ও পাকা কুয়াতে রেনু উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১১ বছরের ডিম সংগ্রহের পরিমানে মধ্যে ২০২৪ সালে ৩ বার নমুনা ডিমের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৬শত ৮০ কেজি, ২০২৩ সালে প্রায় ১৪ হাজার ৬ শত ৬৪ কেজি, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি এবং ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি, ২০২০ সালে রেকর্ড সংখ্যাক ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মো. মোতাহার আলী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.