হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিক চিকিৎসায় যা করবেন

বিটিসি হেল্থ ডেস্ক:  সকল রোগেরই কমবেশি প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। হার্ট অ্যাটাকও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। এগুলোর হেরফের হলে রোগীর অকালমৃত্যুও হতে পারে। এই অকালমৃত্যু রোধ করতে আমাদের সবার হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।

হৃৎপিণ্ড আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনবরত এটি কাজ করে চলেছে। এর মূল কাজ হলো দেহের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করা। কিন্তু মাত্র ৩১০ গ্রাম ওজনের এই যন্ত্রটির ঠিকমতো কাজ করতে নিজেরও শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আসে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে। করোনারি ধমনীর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড নিজের জন্য এই রক্ত সরবরাহ করে। কোনো কারণে রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ।

প্রথমে করোনারি ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে ব্লক তৈরি হয়। তখন হৃৎপিণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেশীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সেগুলো অকেজো হয়ে যেতে পারে। আর একেই আমরা বলি হার্ট অ্যাটাক, যার আভিধানিক নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন। রক্ত চলাচল ব্যবস্থা যে হঠাৎ করেই বন্ধ হবে এমন কোনো কথা নেই। একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা দিতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ:-
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এ বিষয়ে ধারণা থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।

১. হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা। বুকের মাঝখানে ও বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হয় এবং ধীরে ধীরে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। রোগীর মনে হতে পারে তার বুকের উপর কোনো কিছু চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার এমনও মনে হতে পারে যে, বুকের মাঝে কিছু একটা আটকে আছে। এই ব্যথা একটানা বা কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে অনুভূত হয়।

২. শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। বুকে ব্যথার পাশাপাশি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। বুকের ব্যথা ছাড়াও এককভাবে এমনটি হতে পারে।

৩. দেহের উপরের অংশে (নাভীর উপর থেকে) চোয়াল, হাত এবং ঘাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

৪. মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং বদহজম দেখা দিতে পারে।

৫. শীতের মধ্যেও অনবরত ঘামতে থাকা, চোখে ঝাপসা দেখা, দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি নিয়মিত লক্ষণের মাঝে পড়ে।

রোগীর মাঝে এসব লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে এবং ভর্তি পূর্ববর্তী কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একজন রোগীর হার্ট অ্যাটাক হলে খুব দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নিলে ঘটনার ভয়াবহতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা আবশ্যক।

প্রাথমিকভাবে করণীয়:-

১. প্রথমেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে

২. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

৩. রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা খেয়াল করতে হবে।

৪. রোগী কোথাও ভ্রমণে গেলে সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত চিরকুট রাখুন।

৫. হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। দুই হাত দিয়ে রোগীর বুকে চাপ দিয়ে সিপিআর (কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসসিটেশন) দিতে হবে।

৬.  বিপদের মধ্যে কী কী করতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা উচিত।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.