‘হামাস স্টাইলে’ হামলার আশঙ্কা ভারতের

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিরোধপূর্ণ কাশ্মির অঞ্চলে পাকিস্তানের সঙ্গে ডি ফ্যাক্টো সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বিগুণ করেছে ভারত। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠী যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সেই ধরন অনুসরণ করে হামলা চালাতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ভারত। এ কারণেই সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এ খবর জানিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র কর্নেল সুধীর চামোলি বলেছেন, ‘গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা যে ধরনের উদ্ভাবনী উপায়ে আক্রমণ চালিয়েছে, এতে সারা বিশ্বের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে’।
নিয়ন্ত্রণরেখা হলো কাশ্মিরজুড়ে ৫০০ মাইল বিস্তৃত এক সীমানা– যা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছে। ইসরায়েল ও হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকাও এরকম ৪০ মাইল বিস্তৃত এক সীমান্ত দ্বারা বিভক্ত। এই নিয়ন্ত্রণরেখাগুলোতেই বিদ্রোহী কার্যকলাপের পাশাপাশি সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটে।
কিন্তু অক্টোবরে হামাসের হামলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সহিংসতাকে নতুন তীব্রতা দিয়েছে। আর এই সহিংসতা এখনও চলছে। কাশ্মির সীমান্তে এ ধরনের ভয়াবহ সহিংসতা মোকাবিলার জন্যই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন চামোলি।
২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মিরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা প্রত্যাহার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সিদ্ধান্তের পরে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিদ্রোহ বন্ধ করতে এই পদক্ষেপের কথা জানানো হলেও তা আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। পাকিস্তানও এই সিদ্ধান্তকে সীমান্তে সংঘাত নিষ্পত্তি প্রচেষ্টার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছিল। তবে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে ইসলামপন্থি জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও মিলিশিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে।
ভারতের অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মিরকে ফিলিস্তিনের হামাসের মতোই ছায়াযুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায় পাকিস্তান। চামোলি বলেছেন, যদিও এখন পর্যন্ত এই দুই ঘটনাকে সংযুক্ত করার মতো কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি, তারপরও আন্তর্জাতিক ফোরামে কাশ্মির ইস্যুকে তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, এই দুই সমস্যার শিকড় একই।
যদিও ভারত ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ১৯৭৪ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-কে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম অ-আরব দেশ। তারপরও ১৯৯২ সালে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি নিরাপত্তা সম্পর্কও জোরদার করেছে ভারত।
অন্যদিকে ইসরায়েলকে কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি পাকিস্তান। বরং কাশ্মির ইস্যুতে অভিন্নতা বিবেচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন আরও জোরদার করেছে।
এদিকে ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠা, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এছাড়া লেবানন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনেও সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই আছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারতসহ এই অঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন চামোলি।
তিনি আরও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে সচেতন রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে এ সংশ্লিষ্ট যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.