হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর: যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়লো আরও দুইদিন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার চার দিনের যুদ্ধবিরতি আরো দু’দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সোমবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকালই চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যুদ্ধের অন্ধকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি আশা জাগায় এবং মানবতার ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে।
আরো দুই দিনের যুদ্ধবিরতি: সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাজেদ আল-আনসারি নিশ্চিত করে বলেন, চলমান মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতি অতিরিক্ত দু’দিনের জন্য বাড়ানোর একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার এবং কাল বুধবার কমপক্ষে ১০ জন করে নারী ও শিশুসহ ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে দু’দিনে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৬০ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবেন।
কাতারের এই ঘোষণার কিছুক্ষণ মধ্যেই নতুন চুক্তির তথ্য জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাস। এতে বলা হয়েছে, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৪৮-ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। তবে চুক্তির শর্তাবলী আগের মতোই রয়েছে। এর আগে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চাপে গাজায় চলমান চার দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় তোড়জোড় শুরু হয়। রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। এ বৈঠকেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় যুদ্ধবিরতির পূর্ণাঙ্গ চুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে এর মেয়াদ বাড়াতে রাজি হয় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। হামাস যদি প্রতিদিন ১০ জন করে জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তাহলে একদিন করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এই শর্তের কথাই জানায় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শেষ হলেই ফিলিস্তিনের গাজায় পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে হামলা শুরু করবে ইসরায়েলি বাহিনী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও তিনি এ কথা জানিয়েছেন। গত শুক্রবার গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় সাময়িক এ যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে ইসরায়েল ও হামাস। প্রথম দফার বন্দিবিনিময় চুক্তিতে ৫০ জিম্মির মুক্তির কথা থাকলেও গত তিন দিনে ৫৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে কারাবন্দী ১১৭ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। গতকালও এই প্রক্রিয়া চলার কথা।
জিম্মি মুক্তি শেষে আবার যুদ্ধ!: ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, জিম্মি মুক্তির এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে যুদ্ধ, সেটা আবারো শুরু হবে এবং তা শেষ হতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন লাগতে পারে। কিন্তু যদি ইসরায়েলি বাহিনী এরপর গাজার দক্ষিণে মনোযোগ দেয়, যার বেশ পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, তখন পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ইসরায়েল শপথ নিয়েছে, হামাস যেখানেই থাকবে, তাদের ধ্বংস করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ আরো যোদ্ধাদের সঙ্গে দক্ষিণেই কোথাও আছেন এবং খুব সম্ভবত ইসরায়েলিদের জিম্মিদের একটা বড় অংশও তাদের সঙ্গে আছে। এখন যদি ইসরায়েল উত্তরে যেটা করেছে, সেই একই রকম অপারেশন দক্ষিণেও করতে চায়, তাহলে পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কি তখনো অটুট থাকবে?
গাজা উপত্যকার আনুমানিক ২২ লাখ মানুষ এখন দক্ষিণের দুই-তৃতীয়াংশ অংশে এসে জমায়েত হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন গৃহহীন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সামনে কি তাহলে আরো বড় মানবিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে? এছাড়া আল-মাওয়াইসিতে বালুময় মাঠের মধ্যে স্থাপিত তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকও আছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউ) বলছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের বেশির ভাগ এখন দক্ষিণে গাদাগাদি করে থাকছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ হাজার হাজার লোক স্কুল, হাসপাতাল এবং তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের আগাম বৃষ্টি, যা কিছু জায়গায় বন্যাও নিয়ে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটা সমাধানের কথা বলা হচ্ছে। আর সেটা হলো, আল মাওয়াইসির তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করা। এটি হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের পাশে একটা সংকীর্ণ কৃষিজমির এলাকা, যা মিশর সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত। গত সপ্তাহে খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় আকাশ থেকে লিফলেট ফেলে বিমান হামলার ব্যাপারে সতর্ক করা হয় এবং বাসিন্দাদের আরো দক্ষিণে সমুদ্রের দিকে সরে যেতে বলা হয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.