হাতির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি)

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়ায় খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসা হাতির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন এক যুবক। দলছুট বুনো হাতির তাড়ায় যুবকটির মা আহত হয়েছেন এবং তাদের ঘেরা-বেড়া ও ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জিডিতে।
গতকাল শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় এ জিডি করা হয়েছে। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের।
সাধারণ ডায়েরীকারী চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলার কাশেম আলী মিয়াজী পাড়ার মনজুর আলমের ছেলে রেজাউল করিম জানান, গতকাল শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) ভোররাতে খাবারের সন্ধানে একটি হাতি উত্তর বন বিভাগের চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের বাঁশখাইল্লা পাড়াসহ পুচ্ছালিয়া পাড়া লোকালয়ে এসে পড়ে। সকালের আলো ফোটার পর স্থানীয়রা হাতিটিকে দেখতে পায়। তখন হাতিটি এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছিল। উৎসুক মানুষও হাতিটির পিছু নেয়। এসময় তাণ্ডব চালায় হাতিটি। হাতিটির তাড়া খেয়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয়। এদের মাঝে জিডিকারীর মা মর্তুজা বেগম (৬০) মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করেন। তিনি এখন সেখানে চিকিৎসাধীন।
রেজাউল করিম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রায় সময় রাতে হাতির পাল খাবারের সন্ধানে তার এলাকা মিয়াজী পাড়া ও তার আশেপাশে হানা দেয়। কৃষিজমি, ভিটাবাড়ির গাছগাছালির অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। বিষয়টি একাধিকবার বনবিভাগের নজরে আনা হলেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি আরও জানান, গতকাল শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে হাতির তাড়ায় তার মা আহত হলে বিষয়টা বন বিভাগকে অবগত করা হয়। কিন্তু বনবিভাগের এক কর্মকর্তা তাকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এ কারণে হাতি কর্তৃক ক্ষতির বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, হাতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুযোগ পুলিশের নেই। তবে এ ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে বন বিভাগকে একটি প্রতিবেদন দেবে পুলিশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে বন বিভাগের।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় দলছুট হাতিটিকে বনে ফেরাতে সমর্থ হন বনকর্মীরা। কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া হাতিটিকে সন্ধ্যার আগে বন ফেরানো সম্ভব হয়। এসময় কেউ আহত হয়েছেন বা কারা সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানা যায়নি। তবে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবার সঠিক প্রমাণ উপস্থাপন সম্ভব হলে বনবিভাগ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে।
ডিএফও’র মতে, পাহাড়ের কাছাকাছি লোকালয় থাকলে এমন ঘটনা (হাতি আসা) অস্বাভাবিক নয়। তবে, ক্ষয়ক্ষতিহীন ভাবে হাতি বনে ফেরানো অস্বাভাবিক। কিন্তু জীবন হানি ব্যতিরেখে দলছুট হাতিটিকে বিনাক্ষতিতে নির্দিষ্ট আবাসে ফেরাতে পারা শোকরিয়ার বিষয়। এটি সম্ভব করতে শ্রম দেয়া এলিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) সদস্যসহ বনবিভাগের সকল এবং স্থানীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ডিএফও।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বনাঞ্চলের পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে বন্য হাতির দল। উজাড় বনে তীব্র খাবারের সংকট দেখা দেয়ায় এ ঘটনা ঘটছে। এসময় হাতির সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.