হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল বেহাল দশায় পরিণত, কমছে না দালালের দৌরাত্ম্য ! 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার মানুষের একমাত্র চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অসুস্থ্যতা, দূর্ঘটনা নিয়ে হাজারো মানুষ চিকিৎসার আশা নিয়ে ভীড় করেন এখানে।

তবে দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, নিজেই নানান উপসর্গ, সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, রোগীর শয্যা, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটের বিষয়টি এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশ অন্যদিকে কিছুটা ব্যস্ত থাকার সুযোগে হাসপাতাল চত্তরে মাদকসেবী ও দালালদের দৌরাত্ম লাগামহীন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেই কোন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

পানির জন্য নেই কার্যকর নলকূপের ব্যবস্থা। লাখ টাকা খরচ করে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্থাপিত পানির ফোয়ারাটিরও নেই কোন অস্তিত্ব। প্রতিটা ওয়ার্ডের টয়লেটের দরজাগুলো পুরনো হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থা।

আবার কোন কোন ওয়ার্ডের টয়লেটের নেই দরজাই। সেবা নিতে আসা মহিলা রোগীরা পড়েন চরম বিড়ম্বনায়। জরুরী মুহূর্তে হাসপাতালে সীট পাওয়া যায় না। ব্রাদার-ওয়ার্ড বয়রা এ নিয়ে করেন নানান টালবাহানা।

আবার কখনো আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ২’শ টাকা গুজিয়ে দিলেই হয়ে যায় সিটের ব্যবস্থা। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ব্রাদার-বয়রা করেন অজানা দূর্নীতি। সেলাইয়ের সুতা, গুরুত্ব ইনজেকশন চোখের আড়ালেই পকেটে নিয়ে বিক্রি করেন স্থানীয় ফার্মেসীতে। জানা গেছে, স্থানীয় এক ক্ষমতাশালী ব্রাদারের ছত্রছায়ায় হয়ে থাকে এমনটা।

হাসপাতালের ড্রেন গুলো দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনার স্তুপে ভর্তি হয়ে পড়ে আছে। ড্রেন থেকে ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ, বাড়ছে রোগ বালাই। সেবা নিতে এসে আবার অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে।

জরুরী মুহূর্তে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে কোন রক্ত পাওয়া যায় না। একটি দালাল চক্রের কারণে হাসপাতালে প্রায়ই রক্ত সংকট দেখা যায় বলে অভিযোগ রোগীদের। নির্ধারিত স্থানে রক্ত থাকার কথা থাকলেও সেখানে গেলে নাম্বার দেয়া হয় দালালদের। পেশাদার দালালরা অসহায় মানুষদের রক্ত দিয়ে সাহায্যের কথা বলে হয়রাণি করে নানান ভাবে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ঔষধ সংকট হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে লেগেই আছে। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে গেলে দুটো প্যারাসিটামল আর কয়েকটা গ্যাষ্ট্রিকের ট্যাবলেট ধরিয়ে দেন স্টোরের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি।

২৫০ শয্যার এ হাসাপতালে নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। দেখা যায় না শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের, নেই অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ। গাইনী ডাক্তারও থাকেন তার নিজস্ব চেম্বারে। তার কাছে গেলেই দিতে হয় মোটা অঙ্কের হাদিয়া। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য।

জরুরি বিভাগের কর্মরত কয়েকজন কর্মচারী ও প্রশাসনিক শাখার জনৈক কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

ভূয়া সার্টিফিকেট এমসি সরবরাহ করে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন কর্তাব্যাক্তিরা। এতে করে একদিকে যেমন আইনিভাবে হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কিছু মানুষ অপরদিকে সুবিধা নিচ্ছেন এক শ্রেণীর পেশাদার মামলাবাজরা।

খাবারের গুণগত মান নিয়েও উঠেছে নানান প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেনীর কথিত ঠিকাদার সিন্ডিকেট করে নিয়ন্ত্রণ করেন থাকেন রোগীদের খাবার। পর্যাপ্ত গুণগত মানও থাকে না হাসপাতালালের খাবারে। নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হয় না সকালের নাস্তা, রাতের খাবার।

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শামীমা আক্তার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনায় আমাদের সেবার মান ভাল চলছে, ডাক্তারও পর্যাপ্ত রয়েছেন। তবে কিছু মেশিনের স্বল্পতা আছে ঠিকই, আশা করছি খুব দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। হাসপাতালে বহিরাগত দালাল প্রতিরোধে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনায় হাসপাতালের সেবার মান খুবই ভাল চলছে। ইতোমধ্যে নতুন কিছু ডাক্তার হাসপাতালে যোগদান করেছেন। আশা করছি সেবার মান আরও বাড়বে। দালাল ও বহিরাগতদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের অকেজো জিনিষ গুলোর দ্রুত মান উন্নয়ন করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.