হবিগঞ্জ-লাখাই মহাসড়কের দেড়শ’ কোটি টাকার কাজ বন্ধ!

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্প অনুমোদনের পরও গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-হবিগঞ্জ মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ। ২০১৭ সালের শেষ ভাগে ১১১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর লাখাই-নাসিরনগর সড়কে বলভদ্র সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের দূরত্ব কমে ৪৫ কিলোমিটার। কিন্তু নাসিরনগর থেকে হবিগঞ্জ সড়কটির বেহাল অবস্থা ও অপ্রশস্ত হওয়ায় বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে না। পরবর্তীতে ওই সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ওই মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ।

প্রকল্প অনুমোদনের পর কিছুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফলে ভাঙা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে অসংখ্য গাড়ির যন্ত্রাংশ। অসুস্থ মানুষকে যথা সময়ে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ, সংস্কার ও চারটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, তাহের ব্রাদার্স লি., মাহফুজ খান (জেবি) নামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন কাজ চলার পর হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

দীর্ঘদিন সড়কটির সংস্কার কাজ শুরুর আবেদন করলেও সাড়া নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন লাখাই উপজেলাবাসী।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলার মুড়াকরি এলাকার আব্দুল ওয়াদুত মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এক বছর আগে রাস্তাটি ভাঙা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। রাস্তাটি এখন চলাচলের অনুপযোগী।’

বামৈ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মোতালিব মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমাকে মাসে তিনদিন হবিগঞ্জ শহরে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে একদিনও যেতে পারি না।’

ব্যবসায়ী আদনান চৌধুরী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাস্তাটি সংস্কার হলে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের দূরত্ব কমবে ৪৫ কিলোমিটার। এতে পরিবহন খরচ ও সময় কমবে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতিতে কাজ বন্ধ রয়েছে।’

বাস চালক মঈনুল মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বাধ্য হয়েই এই সড়কে গাড়ি চালাতে হয়। প্রতিদিনই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে আমাদের খরচও বেড়েছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল হাই কামাল বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ-নাসিরনগর সড়কটি এখন তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের গলার কাটা। আমরা অনেকবার রাস্তাটি সংস্কারের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু সড়ক বিভাগ বারবার আশ্বাস দিলেও কাজ শুরু করেনি।’

লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘লাখাই সড়কের বেহাল দশার কারণে রাস্তায় গাড়ি উল্টে মালামাল নষ্ট হয়। আর বৃষ্টির সময় ওই সড়কে হাঁটা যায় না।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘অর্থ সংকটের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় হলেই কাজ শুরু হবে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.