হবিগঞ্জে ময়লা আর্বজনার স্তপ জনজীবন অতিষ্ঠ

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:  বারবার উদ্যোগ গ্রহণের পরও জায়গা সংক্রান্ত জটিলতা না কাটায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না হবিগঞ্জ শহরবাসী। গলার কাটা হয়ে আটকে থাকা এই দূর্বিসহ যন্ত্রানার অবসান কবে ঘটবে তাও জানানে না কেউই। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। শত চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।

জানা যায়, পরিবেশবাদি সংগঠন ও সাধারণ জনগণের বিভিন্ন আন্দোলনের পরও শহরের পূর্বদিকে বাইপাস সড়কের দু’পাশে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা। অথচ ওই এলাকা রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান। পূর্বে হবিগঞ্জের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, জেলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কিবরিয়া অডিটরিয়াম ও আনসার ভিডিবি ক্যাম্প। পশ্চিমে জেলা আধুনিক স্টেডিয়াম, উত্তর ও দক্ষিণে জনবসতি।

প্রায় দেড় লাখ মানুষ অধ্যুষিত ৯ বর্গ কিলোমিটারের শহরে গৃহস্থলি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিল্প-করখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব ময়লা শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিন থেকে এনে পৌরসভার ট্রাক ও ভ্যানে করে উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝখানে ফেলা হচ্ছে। একদিন কিংবা দুই দিন নয়, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে সেখানে ফেলা হচ্ছে সম্পূর্ণ শহরের ময়লা-আবর্জনা। এত পরিমাণ ময়লা ফেলা হয়েছে যে, দুপাশের বিশাল খালগুলো সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। আর্বজনার স্তুপ ও দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

এদিকে, মাঝে মধ্যে ওই ময়লার স্তুপে আগুন দিয়ে পুড়ানোর চেষ্টা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে আগুনের ধুয়ায় এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠে। দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয় ব্যবসায়ি ও এলাকাবাসীকে। এতে একদিকে যেমন ময়লার দুগন্ধ ও ধুঁয়ায় এলাকাবসীর বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি অন্যদিকে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। সব কিছু মিলিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই স্থানীয় ভূক্তভোগীদের।

এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতশত যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার লোকজন চলাচল করে। যানবাহনের যাত্রীসহ পথচারীরা নাক, মুখ বন্ধ করে চলাচল করতে হয়। দুর্গন্ধের ফলে এলাকার লোকজনের মধ্যে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবানু। আধুনিক স্টেডিয়ামে বড় ধরনের খেলাধুলাসহ অনুষ্ঠানে দর্শকরা আসতে পারছে না।

এদিকে, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে দুই দফায় জায়গা কিনেও এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে বর্জ ব্যবস্থাপনা সেখানে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম অবস্থায় শহরতলীর আতুকুড়া মৌজায় সাবেক মেয়র জিকে গউছ জায়গা ক্রয় করেন। ওই সময় সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলতে গেলে বাধা প্রদান করেন আতুকুড়া গ্রামবাসী। পরে মিজানুর রহমান মিজান পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আবারও ওই এলাকায় জায়গা ক্রয় করেন। কিন্তু তখনও পূর্বের ন্যায় একই সমস্যা। সেখানে ময়লা ফেলতে বাঁধা হয়ে দাড়ান গ্রামবাসী। দীর্ঘদিন ধরে একই জটিলতার কারণে অনেক চেষ্টা করেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শহর থেকে স্থানাস্তর করতে পারছে না হবিগঞ্জ পৌরসভা।

অপরদিকে, নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান যোগদানের পর ‘গ্রীন শহর, ক্লিন শহর’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজ শুরু করেন। কিন্তু বাইপাস সড়কের ময়লা-আবর্জনা নিয়ে হতাশ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন- ‘যত দ্রুত সম্ভব ময়লা আবর্জনার স্তুপ এখান থেকে সড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যতায় ‘গ্রীন শহর, ক্লীন শহর’ গড়া সম্ভব হবে না।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.