হবিগঞ্জে পানির দামে কেনা হচ্ছে চামড়া! হতাশ বিক্রেতারা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: আজ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। আত্মত্যাগ এবং জানমালের হক আদায় করতে কুরবানির পশু জবাই করা। আর সেই পশুর চামড়া বিক্রির টাকা কোনো এতিম বা অসহায়দের দেওয়া। একসময় হবিগঞ্জ সহ সারাদেশে বেশ দাম মিলত চামড়া বিক্রি করে তবে এবছর চলমান বন্যার প্রভাব, করোনাভাইরাস মহামারি ফলে আর্থিক সংকটের কারণে হবিগঞ্জে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া।

তবে পাড়া-মহল্লা থেকে কম দামে এসব চামড়া সংগ্রহ করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। গত বারের মতো এবছরও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায় ভাটা পড়েছে।

নুরুল ইসলাম নামে একজন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দিন দিন চামড়ার দাম কমতে আছে। গত বছর যে দামে চামড়া বিক্রি করলাম এই বছর তার থেকে আরও কমে দামে বিক্র করেছি। কত টাকায় বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ৩০টাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক জন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,কুরবানির পশুর চামড়ার দাম এত কমেছে ভাবা যাচ্ছে না। কত লোক আসে কুরবানির পশুর চামড়ার টাকা নিতে কিন্তু কিভাবে এই টাকাটা তার হাতে তুলে দেই বলেন। এক কতথায় বলা যায় পানির দামে চামড়া নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । আমরাও দিতে বাধ্য । কারণ তাদের ধরে না দিলেও এই চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে ।

এদিকে হবিগঞ্জের পশুর চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তারা সরকার নির্ধারিত দামেই পশুর চামড়া ক্রয় করছেন।

হবিগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা গেছে, ফুট হিসেবে নয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন আকারের উপর ভিত্তি করে। ৩০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০টাকা দরে এসব চামড়া কিনেছেন তারা।

সকাল থেকেই কুরবানির পর হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে চলছে পশুর চামড়া সংগ্রহ। বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, সস্তা দরে চামড়া কিনছেন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও উপজেলা থেকেও চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা।

গত বছর আড়তদারদের কাছে ‘ন্যায্য মূল্য’ না পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও আবর্জনার ভাগাড়ে চামড়া ফেলে গিয়েছিলেন ফড়িয়ারা। এ বছর বিশ্ববাজারে চামড়ার দরপতন ও দেশীয় শিল্পগুলোর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঢাকার জন্য গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ঢাকায় ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

অন্যদিকে, খাসির চামড়া সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য-সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, সরকার নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনবেন। চাহিদামতো ঋণ বিতরণসহ এ খাতের ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এবার কোরবানির চামড়া নষ্ট হবে না। কোরবানির দিন সারাদেশে চামড়া কেনাবেচার বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। এজন্য তদারকি টিম কাজ করবে।

এদিকে চামড়া সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কোরবানির কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে কেনাবেচা ও সংরক্ষণে কমপ্রিহেন্সিভ তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। ৩১ বছর এবার কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু (প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ) চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। কেস-টু-কেস ভিত্তিতে উল্লিখিত চামড়া রপ্তানির আবেদন পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে ১২ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা সমাধানর লক্ষ্যে কন্ট্রোল সেলও খুলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.