হবিগঞ্জে নেয়া হচ্ছে অটোরিকশা নিবন্ধনের উদ্যোগ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: মাত্র বছর পাঁচেক আগেও হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় এক যানবাহন হিসেবে বিবেচিত হতো ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) ও অটোরিকশা।

কিন্তু সেই যানবাহনগুলোকেই এখন অভিশাপ হিসেবে দেখছেন তারা। অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলে হবিগঞ্জ শহর পরিণত হয়েছে এক দুর্ভোগের শহরে।
এসব যানের কারণে শহরজুড়ে প্রতিনিয়তই তীব্র যানজট লেগে থাকছে। এ ছাড়া প্রায় দিনই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তবে যানজট নিরসনে অবৈধ এসব যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আগের মেয়রের অনুমোদন দেয়া ১২শ টমটম থেকে ১শ টমটম নতুন করে চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, এবার হবিগঞ্জ পৌরসভা থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার অনুুমতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আগামী শুক্রবার অটোরিকশা সমিতির সভা হবার কথা রয়েছে। তবে কতটি অটোরিকশার অনুুুমতি দেয়া হচ্ছে জানা যায়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, হাজার হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলের কারণে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ ইজিবাইকেরই চলাচলের জন্য বৈধ কোনো অনুমতিপত্র নেই। চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও। এমনকি চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। ফলে এসব চালকদের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ব্যস্ততম সড়কে খেয়ালখুশিমতো ইজিবাইক, অটোরিকশা দাঁড় করানো, সড়কের ডান পাশ ঘেঁষে চলা, বেপরোয়া ওভারটেকিং, নির্দিষ্ট কোনো স্টপেজ না থাকা এবং টার্ন নিতে গিয়ে জটলা পাকানো ইজিবাইক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে জানান ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
ব্যবসায়ী আব্দুল আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘যানজটের ভয়ে মেইন রোড দিয়ে চলাচল না করে ব্রেক রোড দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু সেখানেও যানজট হচ্ছে।’
আজ বদিউজ্জামান সড়কের মোড়ে শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নীলা আক্তার। কিন্তু ইজিবাইকের ভিড় বেশি থাকায় তাকে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক (টমটম) কারণে আমরা বিরক্ত। ইজিবাইকের সংখ্যা এত বেড়েছে যে, রাস্তা পার হতেই ভয় করছে। শুধু তাই নয়, ইজিবাইকের আধিক্যে রীতিমতো আতঙ্কিত সবাই। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একসময়ের জনপ্রিয় যানটিই এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।’
গায়ে গায়ে লেগে থাকা টমটম আর অটোরিকশার জন্য ফুটপাতবিহীন সড়কে হাঁটা-চলা করাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটে জীবনযাত্রা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। প্রাইভেটকার কিংবা মোটরবাইক নিয়ে সড়কে বেরই হওয়া যাচ্ছে না।অদক্ষ চালকরা, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া ও যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অথচ এসব দেখার কেউ নেই।
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শহরের যশের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোহাগ ইসলাম।
জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে জনসাধারণের কথা মাথায় রেখে ৫ টাকা ভাড়ায় দুই ১২শ টমটমের অনুমতি দেওয়া হয়। এ বছর আরো ১শ বাড়ানো হয়। কিন্তু চলাচল করছে ৫ হাজারের বেশি। এর বাইরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ১ হাজার। ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ব্যাটারিচালিত টমটম ইজিবাইকের নিবন্ধন প্রদান ও নবায়ন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তখন থেকে মূলত টমটম নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। তবে এরপরও প্রতি বছর টমটম নিবন্ধন নবায়ন করা হয়।

এদিকে শহরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পৌরসভা, কিংবা ট্রাফিক বিভাগ কেউই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে না।

তবে গত বছর প্রশাসন এর এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় টমটম বন্ধ করে একটি নির্দিষ্ট রঙের সিএনজি চালুু করা হবে। যাতে শহরের বাইরে থেকে গাড়ি এলেই তা চিহ্নিত করা যায়। মূল্য উদ্দেশ্য হলো, আশপাশের এলাকা থেকে যেন টমটম এসে শহরে যানজট তৈরি না করতে পারে। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ করা হবে।

এদিকে টমটম আর রিকশার ব্যাটারি চার্জ করার বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে চাপে পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

জানা যায়, প্রতি দুই হাজার ইজিবাইক চার্জ করতে দিনে চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে শহরে চলাচল করা ৫ হাজারের বেশি টমটম আর অটোরিকশা চার্জ করতে দিনে খরচ হচ্ছে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর বাড়তি এই চাহিদার কারণে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন শহরবাসী। অনেকেই অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করছেন বাড়িতেই। গ্যারেজত আছেই।

অবৈধ টমটম আর নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘ শহরে সড়ক ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। অনুমোদনহীন ইজিবাইক-ব্যাটারি রিকশা। কেউই নিয়ম যেমন মানতে চায় না, তেমনি সহনশীলও নয়।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.