হবিগঞ্জে ড্যান্ডি নেশার কবলে কোমলমতি শিশুরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরের মোড়, রাস্তা পার হতেই হঠাৎ চোকে পড়ল থানার উল্টো দিকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল এলাকায়। চারটি শিশু স্থানীয় মা’ ফার্মেসীর সামনে বসে ঝিমুচ্ছে। প্রত্যেকের হাতেই একটা করে পলিথিন তলানিতে তরল জাতীয় কিছু একটা। তারা নাকের সামনে ওই মুষ্টিবদ্ধ পলিথিন নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।তিনজনের বয়স আনুমানিক প্রায় ৮-১২ বছরের মধ্যে। একটু আশ্চর্য হলেও সত্যিই যে তারা নেশায় মগ্ন হয়ে আছে। ড্যান্ডি নামের এক প্রকার মাদকের আসক্তিতে আসক্ত তারা। একরকম হাজারো শিশু বর্তমানে আসক্ত হয়ে পড়ছে ড্যান্ডির মরণ ফাঁদে। ‘ড্যান্ডি’ এখন পরিণত হয়েছে মরন নেশায়।

হবিগঞ্জ শহর ও আশ-পাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যাপকতা। শহরের এক শ্রেণির রং ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় কোমলমতি শিশুদের হাতে ছাড়া মুল্যে বিক্রি করছে। ফলে স্কুল পড়ুয়া ও পথশিশুরা এ নেশায় আসক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে ছিন্নমূল শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এ নেশা। এ সব শিশুরা সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ঘুরে ভিক্ষা করে। সারাদিনে যে টাকা হাতে আসছে সে টাকা দিয়ে সংগ্রহ করছে ড্যান্ডি নামক নেশার দ্রব্য।

এ মরণঘাতী নেশা শুধুমাত্র পথশিশু বা ছিন্নমুল শিশুদের মধ্যে নয় ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুলগামী অল্প বয়সী ছেলেরাও। শিশুদের মাদকে নতুন করে সংযোজিত হয়েছে এ ড্যান্ডি।

জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন (আঠা) পলিথিনে ভরে কিছুক্ষণ পরপর মুখের সামনে নিয়ে শ্বাস টেনে নেশা করছে তারা।

প্রকাশ্যে ফুটপাথে, অলিগলিতে কিংবা রাস্তায় হাঁটতে-হাঁটতে তারা পলিথিন মুখে ধরে শ্বাস নেয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের থানার মোড়, সদর হাসপাতাল এলাকা, আদালত পাড়া, নতুন বাস স্যান্ড, চৌধুরী বাজার নদীর পাড়, শায়েস্তানগর, শায়েস্তানগর রেলওয়ে জংশন এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যে ড্যান্ডি নেশা গ্রহন করছে কোমলমতি শিশুরা। আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারন মানুষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।

থানার মোড় এলাকায় ড্যান্ডি সেবনকারী শিশু শিহাব জানায়, সারাদিন খাটুনির পর হাত-পা ব্যথা করে। তখন পলিথিনে ফুঁ দিয়ে নিশ্বাস নিই। প্রথমে বুক জ্বালা করে, কিছুক্ষণ পর ভালো লাগে, ঘুম আসে। ঘুমালে কোনো কষ্ট থাকে না। এমনকি ক্ষুধাও লাগে না।

হাসপাতাল এলাকায় ড্যান্ডি নেশায় বুদ হয়ে থাকা শিশু কন্যা সোনিয়া জানায়, খাইতে-খাইতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন না খেলে শরীর কাঁপে, হাত-পা শুকিয়ে যায়, বুকে চাপ অনুভব হয়, কথা বলতে পারি না। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। যতক্ষণ না নিই ততক্ষণ শান্তি পাই না।

এ বিষয়ে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এর প্রতিক্রিয়া খুবই বিপদজনক। অতিমাত্রায় এসব নেয়ার ফলে মানুষের মস্তিকে সুস্থ ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা যে কেমিকেল বিক্রিয়ার ফল, লাইক সিরোটনিনকে এতো কমিয়ে দেয় আর অক্সিজেনের অভাব ঘটিয়ে মারাত্মক হেলোসিয়েসন তৈরি করে।

এর ব্যবহারকারীরা সাধারণত হায়পক্সিয়া (অক্সিজেনের অভাব) মারা যায় কারণ, এটি অক্সিজেন বন্ধ করে মস্তিক এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেটি মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

নিউমোনিয়া, কার্ডিয়াক ফেইলরও হতে পারে। এছাড়া এর সেবনকারী অনির্দেশ্য আচরণ করতে পারে, ঝলসিত চেহারা মানে চেহারা বিকৃত হতে পারে, মাথা ঝিন-ঝিন করতে পারে, মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, বমি-বমি ভাব হতে পারে।

এ ব্যাপারে সরকারি শিশু পরিবারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক নিপুন রায় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুধুু ড্যান্ডি কেন যে কোন নেশা নির্মূল করা কোন কালেই সম্ভব হয়নি। আর হয়ত হবেও না, কিন্তু নিজের-নিজের জায়গা থেকে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

এই ড্যান্ডি নেশার গ্রহীতারা যেহেতু বেশীরভাগই কম বয়সের পথশিশু তাই এই ব্যাপারটায় আমরা অনেকেই উদাসীন। কিন্তু আজ যে নেশা পথের শিশু করছে তা রোধ না করলে কাল সে নেশা আপনার আমার ঘরের শিশু ও করবে।

তিনি আরো বলেন, এই ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, রাস্তাঘাটে এরকম দেখলেই ওদের নিবৃত্ত করতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে সাময়িক সুখের নেশায় কি সর্বনাশের দিকে ওরা যাচ্ছে।

আপনি আমি-আমরা সবাই এগিয়ে আসলেই অনেকাংশে এই মরনঘাতী নেশার হাত থেকে আমাদের শিশুদের আমরা বাঁচাতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস’।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.