হবিগঞ্জে ঝিমিয়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:  সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও ঝিমিয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামগঞ্জের হাজারো সেবা গ্রহীতা মানুষ। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলসহ ভোক্তভুগীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ।

জানা যায়, ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নরমাল ডেলিভারিসহ নানা প্রকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ৩০ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু জেলার অধিকাংশ ক্লিনিকই চলছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। বিভিন্ন ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা প্রায়ই থাকেন অনুপস্থিত। সম্প্রতি অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি নজরে আসলে জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক পরিদর্শন করেন সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ দেবপাদ রায় ও হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন একেএম মোস্তাফিজুর রহমান।

পরিদর্শন কালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আজিমনগর কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সুব্রত কুমারকে শোকজ করাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়।

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৬, লাখাইয়ে ১৭, মাধবপুরে ৩৬, চুনারুঘাটে ৩৩, নবীগঞ্জে ৩৮, বাহুবলে ১৯, বানিয়াচংয়ে ২৯ এবং আজমিরীগঞ্জে ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

এসবের প্রত্যেকটিতে একটি ভবন, একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর নিযুক্ত। তবে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ১৩টিতে ভবন থাকলেও ৩টি পরিচালিত হচ্ছে অস্থায়ীভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে।

জানা গেছে, জেলা শহরের আশপাশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নরমাল ডেলিভারীসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা খুবই নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তদারকি না থাকায় খেয়াল-খুশিমতো দায়িত্ব পালন করছেন কর্মরতরা। ৩০ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও তা প্রদান করা হচ্ছে না। সরকারি ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসীতে।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ফদ্রখলা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ওই গ্রামের ৬০ বছর বয়সী আয়েশা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকারি ঔষধ নিবার লাগি ৩ দিন আইলাম, একদিনও ফাইলাম না, এই ধরণের আসপাতাল (হাসপাতাল), থাইক্ক্যা অই কিতা অইব, আর না থাইক্ক্যা ওই আমরার কিতা অইব’?।

শুধু ফদ্রখলা কমিউনিটি ক্লিনিকই নয়, সম্প্রতি কয়েকদিন বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে এমন অভিযোগের চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর, জলসুখা, বদলপুর, আজিমনগর ও কাকাইলছে, বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর, কাদিরগঞ্জ, কাগাপাশা এবং দৌলতপুর এলাকার ৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে পাওয়া যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে।

অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ক্লিনিক খুলে কিছুক্ষণ বসে তালাবদ্ধ করে চলে যান কর্মচারীরা। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদেরকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ঔষধ দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, তাদের এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কখনও ঔষধ পাওয়া যায় না। কর্মরত একজন থাকলেও মাসে দুয়েকদিন এসে কিছু সময় বসে চলে যান।

কাকাইলছেও গ্রামের আমিনা খাতুন বিটিসি নিউজকে জানান, সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাননি। ২ ঘন্টা বসে থাকার পর এক ব্যক্তি আসলেও তাকে কোনও ঔষধ প্রদান করেননি। বরং তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।

বদলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কলেজ ছাত্র এম এ হালিম বিটিসি নিউজকে বলেন, তার এলাকার লোকজন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিক একটা থাকলেও কোনও কাজে আসছে না। হাওরাঞ্চবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ শুনেছি, খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ দেবপাদ রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য উদ্যোগ হচ্ছে সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়।

এ ব্যাপারে অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না’।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.