হবিগঞ্জস্থ ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’র পাতানো দরপত্রে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছে বাজার দর নির্ধারণ কমিটি

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জস্থ ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’র পাতানো দরপত্রে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছে বাজার দর নির্ধারণ কমিটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বাজার দর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ মোঃ শাহীন ভূইয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বাজার দর নির্ধারণের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই সম্ভব হয়নি। যে কারণে কিছু অনিয়ম থেকে যেতে পারে’। তবে তিনি নিজের দায় এড়িয়ে বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িত নই’।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’র দরপত্রে অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জেলাজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। সচেতন মহলসহ সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন তীব্র প্রতিক্রিয়া। ফেইসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেই দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ আবু সুফিয়ানের অপসারণ।

আজ দুপুরে সরেজমিনে বিষয়টির খোঁজ-খবর নিতে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে কয়েকজন প্রভাষক ছাড়া আর কাউকেই পাওয়া যায়নি। যারা আছেন তাদের কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। ছবি তুলতে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ আবু সুফিয়ানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ডাঃ মঈন উদ্দিন সাকু নামে একজন প্রভাষক বাঁধা প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে দুর্ব্যবহারও করেন সাংবাদিকদের সাথে। অনেক পীড়াপিড়ির পর বাজারদর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ডাঃ মোঃ শাহীন ভূইয়া মুখ খুললেও দূর্নীতির দায় নিজের কাঁধে নিতে চাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হবিগঞ্জবাসীর জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার অনন্য উপহার। যারা স্বপ্নের এ কলেজকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের খোঁজে বের করা হোক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক কঠিন শাস্তি’।

দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আব্দুজ্জাহেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি হবিগঞ্জবাসীকে কলঙ্কিত করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। দ্রুত তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হোক। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আনা হোক আইনের আওতায়’।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বলা হচ্ছে কলেজে পুকুড় চুরি হয়েছে। আসলে পুকুড় নয়, হয়েছে নদী চুরি। তাছাড়া কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই উঠেছে পুরাতন খোয়াই নদীর ভূমি দখলের অভিযোগ। এতকিছুর পরেও তিনি কিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন তা আমাদেরকে বিষ্মিত করে। আমার মনে হয়, অভিযুক্তরা দায়িত্বে থাকলে আগামীতে কলেজের কালো ব্ল্যাকবোর্ডকেও সাদা করে ফেলবেন’।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে মালামাল ক্রয়ের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে অংশ নেয় ৭ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নির্ঝনা এন্টারপ্রাইজ ও পূনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় মালামাল ক্রয়ের দায়িত্ব। অভিযোগ রয়েছে, ওই দুটি প্রতিষ্ঠান বাজার দর নির্ধারণ কমিটির যোগসাজষে প্রায় ৮ কোটি টাকা দূর্নীতি করেছে। ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও ওজনমাপার যন্ত্রসহ বিভিন্ন মালামালের মূল্য দেখানো হয়েছে বাজাদরের পাঁচ থেকে ৭ গুণ বেশী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.