হত্যার পর স্ত্রী’ শ্বাশুড়ির লাশ নদীতে ফেলে দেয় ঘাতকরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে মা-মেয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামী ঘাতক শেলু মিয়া (৩০) কে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ একটি দল। আর তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে ডাবল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

মূল ঘাতক জামাতা শেলু মিয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান। এতে করে বেড়িয়ে এসেছে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্য কর তথ্য। এক সাথে বৃদ্ধ মা ও তার বিবাহিতা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ১৫ দিনের মধ্যে মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের ফলে চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারে মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ঘাতক জামাতা শেলু মিয়া।

এ ঘটনায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বুধবার রাত ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে তার তত্তাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম রাজু আহমেদ, শৈলেন চাকমা, ডিবি’র ওসি মানিকুল ইসলাম, এসআই ধ্রুবেশ চক্রবর্তী, এসআই আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নবীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতককে গ্রেফতার করেন। সে হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার নুর মিয়ার পুত্র।

জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর বানিয়াচং উপজেলার ১২নং সুজাতপুর ইউনিয়নের শতমুখা গ্রামের অংশে হবিগঞ্জ শহর থেকে খোয়াই নদীর ভাটির দিকে অনুমান ৩৫ কিঃমিঃ দূরে নদীতে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ (৩৫) উদ্ধার করে সুজাতপুর তদন্ত কেন্দ্র। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করতে না পেরে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাপন করা হয়। মৃতের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকালে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

পরে সুজাতপুর তদন্ত কেন্দ্রর ইনচার্জ এসআই ধ্রুবেশ চক্রবর্তী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে বানিয়াচং থানায় একটি মামলা নং-১৬ দায়ের করেন। এর কিছু দিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জেলার বানিয়াচং থানার ১২নং সুজাতপুর ইউনিয়নের পূর্ব বাজুকা গ্রামের অংশে খোয়াই নদীর ভাটির দিকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় পঁচাগলা অজ্ঞাতনামা মহিলা (৫০) এর লাশ উদ্ধার করে সুজাতপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

প্রাথমিকভাবে মৃতের ছেলে মোঃ ফুল মিয়া সনাক্ত করেন ওই বৃদ্ধ মহিলা তাঁর মা বলে পরিচয় নিশ্চিত করেন। একই সাথে সে জানায় গত সেপ্টেম্ব থেকে তার মা ও বোন নিখোঁজ রয়েছে। আর এতে করেই নড়েচড়ে বসে বানিয়াচং থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশ।

বৃদ্ধা মহিলা হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম। এরই মাধ্যে শহরের এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে নিহত ফুলবরণ নেছার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। এ মোবাইল ফোন উদ্ধারের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় খোয়াই নদী থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দুটি মা-মেয়ের।

পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার নির্দেশে একের পর এক অভিযান চালায় বানিয়াচং থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর থেকে গ্রেফতার করা হয় ফুলবরণ নেছার স্বামী মোঃ সেলু মিয়াকে। গ্রেফতারকৃত সেলু মিয়াকে ডিবি কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বেড়িয়ে আসে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের রহস্য।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা এসআই এম এ ফারুক আহমেদকে। গত রাত ১১টায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) এক প্রেস ব্রিফ্রিং করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রেফতারকৃত সেলু মিয়ার স্মীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দীর বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, প্রায় ২ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ সদর থানাধীন উমেদনগরস্থ নুর মিয়ার পুত্র সেলু মিয়া (৩০) এর সাথে মোঃ ফুল মিয়ার নিখোঁজ বোন ফুলবরণ নেছা’র বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কলহ্রে সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে সেই কলহ্ চরম আকার ধারণ করে।

এ নিয়ে ২য় স্ত্রী ফুলবরণ নেছা’র সাথে বিজ্ঞ আদালতে মামলা মোকদ্দমাও চলতে থাকে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মা ও বোন হবিগঞ্জ সদর কোর্টে আসার জন্য পূর্বের দিন বিকালে বানিয়াচং নিজ বাড়ী থেকে বের হয়ে হবিগঞ্জ শহরস্থ উমেদনগরে তার চাচাতো ভাই এনামুল এর ভাড়া বাসায় রাত্রিযাপন করেন। পরদিন অর্থাৎ ৫ তারিখ সকাল বেলা সেলু মিয়া ফোন পেয়ে এনামুল এর বাসায় চলে আসে। বাসায় তার সাথে তার স্ত্রী, শ্বাশুড়ী, এনামুলসহ মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তির বিষয়ে কথাবার্তা বলে। এক পর্যায়ে সেলু চৌধুরী বাজারস্থ তাঁর পিতার দোকানে চলে যায়।

ওই দিন বিকালে সেলু মিয়া তার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীকে ফোন দিয়ে চৌধুরী বাজারস্থ মায়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে এনে কথাবার্তা বলে। তারপর সে আসর এর নামাজের পর তাদেরকে নিয়ে শহরের উমেদনগরস্থ তাঁর নিজ বাড়ীতে নিয়ে যায়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.