হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে কে?

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাবছরে একটা মাস হাজির হলে গোটা জাতি শোকাহত হয়ে পড়ে। সেটা হলো ‘আগস্ট’ মাস। গোটা জাতি ছিল শোকাহত। সত্যিই মানুষটি ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সংগ্রামী। অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন সবখানে। সাময়িক পরাজিত হলেও আত্মবিশ্বাস হারাননি। ফলপ্রসূতে মাত্র নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় কারাগারে গেলেও এই দেশের স্বাধীনতার স্থপতি হয়ে আজও অমর হয়ে আছেন। জানেন তিনি কে? নিশ্চয় চিনে ফেলেছেন।

তিনি হলেন – বাংলাদেশের বৃহৎ ইসলামিক প্লাটফর্ম ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সবাই কি আর বঙ্গবন্ধু হতে পারে?
বঙ্গবন্ধু হতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুুর জন্মভূমিতে বেঁচে থাকার অধিকার তো রাখে!  যারা ভালভাবে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। এই সোনার বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় রুপ দিবে – তারা কিনা আজ ধ্বংসের পথে। একেকটি পরীক্ষার ফলাফলে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার মতো মারাত্মক পথে ঝুকে পড়ছে!

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা উদ্বেগজনক।  আত্মহত্যাকারীর সংখ্যাও কিন্ত কম নয়!
বিশেষভাবে, কিশোর-কিশোরী,তরুণ – তরুণী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে।  পরীক্ষার ফলাফলের পর আত্মহত্যার মিছিল যেন থামছেনা

দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাগুলো থেকে প্রকাশিত খবরেও সেটি দৃষ্টিগোচর  হয়।

গত ৯ মে,২০১৮  দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ‘বাড়ছে শিশু আত্মহত্যার প্রবণতা ‘ শিরোনামে প্রকাশিত ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। যেখানে ২০১২ থেকে ২০১৮  সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ৯৭০ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে বলে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের বরাত দিয়ে তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের মতে,  গত ৬-ই মে,২০১৮ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের  পর ৭ ও ৮ মে ১৩ জন আত্মহত্যা করে!

বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ থেকে  ১০ মে তিনদিনে ৪৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যাদের সবাই ফলাফল প্রাপ্ত।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চারমাসে দেশে ১১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে বলে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তাদের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর  সংখ্যা ২১৩ জন! প্রতিমাসে  গড়ে ১৭ জন আত্মহত্যা করে!

যার মধ্যে মেয়ে আত্মহত্যাকারী ১৬০ জন! ছেলে ৫৩ জন। অর্থাৎ শতকরা ৭৫ শতাংশই মেয়ে। যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮’র মধ্যে।

তার আগের বছর ২০১৬ সালে ১৪৯ জন আত্মহত্যা করে।

তাছাড়া বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ১ সপ্তাহে ১৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যার মধ্যে ১৫ জন-ই মেয়ে!
আর আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যায় ২৯ জন। যার মধ্যে শিক্ষানগরী রাজশাহীর ১৫ জন,রংপুরের ৭ জনের ১ জন ছেলে ৬ জন মেয়ে,টাঙ্গাইলের ৭ জন।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম জানায়, প্রতিবছর গড়ে প্রাথমিক সমাপনী এবং জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর ১০-১৫ জন আত্মহত্যা করে।

তাছাড়া ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক ফলাফল প্রকাশের দিন ফলাফল প্রকাশের ঘন্টাখানেকের মধ্যে  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় অর্ধশতাধিক টিনএজ শিক্ষার্থী। যারা ঘুমের ঔষধ খেয়ে অচেতন হয়ে যায়।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে  আসা খবরগুলো থেকেও আত্মহত্যার নানান  বিবরণ পাওয়া যায়। আত্মহত্যাকারীরা পারিবারিক,সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপেই এমনটা করে থাকেন বলে লক্ষণীয়। যার মধ্যে সিংহভাগ গলায় ফাঁস, বিষপান কিংবা রেললাইনের নিচে ঝাপ দিয়ে  প্রাণত্যাগ করেন।

বন্ধু নাহিদের মতো কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও সিংহভাগই বাস্তবতাকে  স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননা। সমাপনি পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে স্থান করা নাহিদ চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ফেল করেছেন ইংরেজিতে! মেনে নিয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। আমি যোগাযোগ করতে না পারলেও ইংরেজিতে ফেল করে  উল্টো আমাকেই ফোন দেয় সে! স্বাভাবিক কণ্ঠ শুনে ভাল রেজাল্ট হয়েছে মনে করে মিষ্টি খেতে চাইলে সে জানায়- ইংরেজিতে ফেল! ফেল করেও এত স্বাভাবিক আছ কেন? জানতে চাইলে শুনায় অস্বাধারণ কিছু উক্তি! এই তো হলো  প্রকৃত বিবেকবান  শিক্ষার্থীর মনোবল!

কিন্ত শিক্ষার্থীরা বাস্তবতাকে মানতে না পেরে  চলে যায় মারাত্মক পথে।

পঞ্চগড় জেলার শাবনুর আক্তার (১৯) প্রথমবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও ধৈর্য্যধারণ করে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়। কিন্তু, দ্বিতীয়বারও ফেল করায় লজ্জায় দুনিয়া ছেড়েই চলে গেলেন!

জামালপুর জেলার শারমিন আক্তার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করলে রেললাইন ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে!

রংপুরের জান্নাত আক্তার (১৫) রাজশাহীর পিএন স্কুল থেকে জেএসসি পাশ করে ভর্তি হয় চট্টগ্রাম গার্লস স্কুলে। অসাধারণ মেধাবী এই শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় দুইটি বিষয়ে ফেল করে। কাউকে কিছু না বুঝিয়ে রাতের আধারে বিষপান দুনিয়া ছাড়ে!

বঙ্গবন্ধুর নিজ জেলা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া এলাকার  পূজা (১৬)  বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। শিক্ষকদের নয়নের মণি। মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষা শেষ। সকলের প্রত্যাশা পূজা গোল্ডেন এ প্লাস  পাবে। ফলাফল প্রকাশিত হলো। পূজার রেজাল্ট – গণিতে ফেল!!
স্কুলের শিক্ষকরা কল্পনাই করেননি পূজা ফেইল করবে! শিক্ষকরা যখন বোর্ড চ্যালেঞ্জের কথা ভাবছেন তৎক্ষনাৎ খবর আসলো, পূজা আর দুনিয়াই নাই! পরিবারের আদরের সন্তানটি সবাইকে কাঁদিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে!

এরা অকৃতকার্য হয়েছে বিধায় আত্মহত্যা করেছে। কিন্ত পরীক্ষায় পাশ করেও কি জীবন নষ্ট করে ফেলতে হয়?
বাগেরহাট জেলার জোবায়দা আক্তার মীম (১৬)। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন বটে। কিন্তু সেটা কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট  ছিলনা। স্কুলের শিক্ষকরাও আশা করেছিলেন মীম  জিপিএ-৫ পাবে। কিন্ত পেলেন বি-গ্রেড!

এই চেহারা কি আর সমাজে,স্কুলে দেখানো যায়? আবেগপ্রবণ হয়ে বিষপান করেই দুনিয়া ছাড়লেন!

এভাবে দেশের শতশত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছেন এই দুনিয়া ছেড়ে। নিজেদের জীবনকে বৃথা ভেবে  আত্মহত্যার মতো মারাত্মক পথে পা বাড়াচ্ছে জাতির ভবিষ্যতরা।
এগুলো তো দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া একদল ‘জাগ্রত বিবেক’!
কিন্ত, দেশের গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দরে ঘরে ঘরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যে দিনের পর দিন চোখের জলে বালিশ ভাসিয়ে দেয় সেটা কি কেউ দেখেছে?
নাকি তাদের নিয়ে কেউ ভেবেছে?

যারা খুব বেশি আত্মপ্রত্যয়ী না হলেও জীবনটা মূল্যবান ভেবে আত্মহত্যা করতে পারেননা।  কিন্ত, দিনের পর দিন হতাশ জীবনযাপন করেন আর রাতের পর পর চোখের জলে নিজের বালিশকে ভাসিয়ে দেন! কিংবা একটা সময় মাদকসেবী আর সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখায়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাদক,সন্ত্রাস দেশের অন্যতম বড় সমস্যা হলেও ‘বাল্যবিবাহ’ কিন্ত ছোট সমস্যা নয়। এটাও অন্যতম বড় ব্যাধী।
বিশেষভাবে, মেয়েরা বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে চলাফেরা করে এই বাল্যবিবাহের প্রভাবে। আর এই মারাত্মক ব্যাধী সংঘটিত হচ্ছে পরীক্ষার একটা রেজাল্টের জন্যই।

‘রেজাল্ট ভাল হলে পড়লে-পড়বে, খারাপ হলে বিয়ে-সাধি দিয়ে বিদায় করে দিব’ – গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের বুলি।

অনেক মেয়েদের মুখে শুনা যায়- ‘ফেল করলেই বিয়ে! এ প্লাস না পেলেই বিয়ে! ভাল কোথাও চান্স না পেলে জীবন থেকে  লেখাপড়া শেষ’!

বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আত্মহত্যাকারীদের সিংহভাগই মেয়ে।যারা আত্মহত্যা করেনা বাল্যবিয়ের শিকার অধিকাংশই- পরীক্ষার রেজাল্ট এবং দারিদ্র্যতার প্রভাবে। একদিকে সরকার এবং প্রশাসন বাল্যবিবাহ রোধে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে ব্যস্ত। অন্যদিকে পরিবার এবং কিছু মূর্খ সমাজ এই মেয়েদের কটাক্ষ  করে দ্রুত বিয়ে দিতে অগ্রগামী।

আচ্ছা, তাকে এই বিয়ের অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ভালবাসা আর  আন্তরিকতা  দিয়ে পড়ালেখা করালে সে তো আরও ভাল ফলাফল করতে পারতো। রেহাই পেত মানসিক রোগ থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বের প্রতি চারজনে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। যেটা স্বাভাবিক থেকে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, স্ক্রিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামক ছোট ছোট পর্যায় থেকে মানসিক রোগের উৎপত্তি।  যেখান থেকে আত্মহত্যার মতো প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত আসে।

আপনি কি কখনো ভেবেছেন- আপনার একটা আচরণের জন্য আপনার সন্তানটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে! আত্মহত্যা করে আপনাদের মাঝ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে পারে সেটা কি কখনো  ভেবেছেন?

অভিভাবকদের কাছে আমার প্রশ্ন, কেন আপনার সন্তানের সাথে এরকম আচরণ?  তথাকথিত সমাজব্যবস্থার ছোবলে পড়ে  আপনি কেন তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন? কেন তার হতাশা দূরীভূত করে পাশে নিচ্ছেন না? একটা রেজাল্টে মেয়েটির বাল্যবিবাহের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে চিরতরে দাফন দিচ্ছেন কেন?

আপনি অভিভাবক – আপনি জানেন কি? ভারতের মহারাষ্ট্রে এক হিন্দু  ঘরের সন্তান চার বিষয়ে ফেল করে! তার বাবা কোনো মানসিক চাপ না দিয়ে ঢোল বাজিয়ে এলাকাবাসীকে মিষ্টি খাওয়ানোর আয়োজন করে!!
আপনাকে সেরকমটা বলছি না। বলছি যোগ্য সাপোর্টের কথা। ‘পারিবনা একথা বলিওনা আর,একবার না পারিলে দেখ শতবার ‘-বাস্তবে এর যথার্থ প্রতিফলনের কথা।

আপনার সাপোর্টে এই সন্তানটিই তো হতে পারে- ইমাম বুখারী, শেখ সাদী, কাজী নজরুল, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, কল্পনা চাওলা,ভ্যালেন্টিনা তেরেস্কোভা।

কেন আশা ছেড়ে দিচ্ছেন?  প্রত্যাশা রাখুন।  উৎসাহ দিন। আপনার সন্তানটি হবে আগামীর উমর ,ওসমান আর মা সুমাইয়া,খাদিজা। আলোকিত করবে এই দুনিয়া। সুপথে ডাকবে লাখো হতাশাগ্রস্থ পথহারা মানুষকে।

সত্যিই একটা রেজাল্ট-ই  কি জীবনের সবকিছু?  একটা রেজাল্ট-ই জীবন মৃত্যুর লড়াই? কেন এই পরিস্থিতি?  আমাদের সমাজব্যবস্থা এরকম কেন?

হা,রেজাল্ট ভাল করতে হবে। পড়ালেখাতে মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান কাজ অধ্যাবসায়। পিতামাতা,আত্মীয়স্বজন সন্তানদের কাছে  অনেক ভাল কিছু  প্রত্যাশা করে। পিতামাতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানের পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দেন। প্রত্যেক পিতামাতা-ই সন্তানের কল্যাণ চান বিধায় এত কষ্টের টাকা খরচ করে প্রাইভেট,কোচিং আর বইখাতার ব্যবস্থা করে দেন। আমার নিজের পরিবারেও সেটা দেখেছি। বাবা পবিত্র ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহার সময় আমাদেরকে কিনে দেন নতুন নতুন পোশাক। অনেকসময় বাবা নিজে পুরাতন পোশাকে ঈদ উদযাপন করেন! তবুও সন্তানদেরকে  বুঝতে দেননা।  আড়ালে চোখের জল ফেলে হাসিমুখে খাবার তুলে দেন সন্তানের মুখে! এই তো হলে যোগ্য বাবা। অভিভাবকরা তো তাকিয়ে থাকেন সন্তানের দিকে। তবে সেটা টাকাপয়সা, অর্থ সম্পদের জন্য নয়। শুধুমাত্র একটা ভাল রেজাল্টের জন্য। একটা ভাল রেজাল্ট পাল্টে দিবে সন্তানের জীবন।

সেটা শিক্ষার্থীর একা কাজ না! তারা  পড়ালেখা করবে অভিভাবকরা তাদের যোগ্য সাপোর্ট দিবে। কোনো কারনে বিচ্যুতি হলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বরণ করে নেবে।তবেই তো সেই সন্তানটি যোগ্য হয়ে উঠবে।

কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো! ঐ যে প্রবাদবাক্য- সুসময়ের বন্ধু!  পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করলে সবাই বাহবা দেয়,মিষ্টির বাজার সোনার বাজার হয়ে যায়! কিন্ত, ফলাফল খারাপ হলে সবাই তাকে ধিক্কার দেয়! না পরিবার,না সমাজ, না প্রতিষ্ঠান, না সহপাঠী- কেউই তার পাশে দাড়ায় না! ঐ শিক্ষার্থী  যে বিকারগ্রস্ত হয়ে মারাত্মক পথে চলে যেতে পারে সেটা কেউ উপলব্ধি করেনা। সচেতনরা এটা  উপলব্ধি করলেও সকলের কাছে ‘চোখের বালি’ হয়েই থাকে।

শিক্ষার্থী বন্ধুরা- কেন? কেন আত্মহত্যা করবে? তোমরা এই দেশের বোঝা নাকি? তোমরাও তো এদেশের নাগরিক। তোমরাও আশরাফুল মাখলুকাত – সৃষ্টির সেরা জীব। যেখানে একটা পিঁপীলিকা বেঁচে থাকার জন্য সারাক্ষণ সংগ্রাম করে।  কোনসময় খাবার না পেলেও মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়া থেকে রক্ষার্থে  নানান কৌশল অবলম্বন করে। তাহলে তোমরা  সেরা জীব হয়েও কেন আত্মহত্যা করবে? কেন মূল্যবান একটা জীবনকে নিঃশেষ করে ফেলবে ? কেন ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সামান্য একটা রেজাল্টে আবেগপ্রবণ হয়ে চিরস্থায়ী আখেরাতে জাহান্নামে জায়গা করে নিবে?

প্রয়োজনে জীবন দিবে,রক্ত দিবে। সংগ্রামী চেতনা লালন করে অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরের মতো জীবন দিতে হবে।কিন্ত,আত্মহত্যা নয়।

কখনো না! কোনো ভাবেই না। ঐ ধরণের কোনো চিন্তায় মাথায় রাখবেনা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করো,বিবেক দিয়ে চিন্তা করো। সাময়িক খারাপ লাগবে,সমাজ ধিক্কার দিবে, কটাক্ষ করবে।  কিন্তু,স্বাভাবিকভাবে তার মোকাবেলা করে কঠোর সাধণা করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের পরিচয়।নিজে তৈরি হও সোনার মানুষ,উপহার দাও মাদক,সন্ত্রাস দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।

সত্যিকারের বিবেকবান বীরেরা না হয় নাহিদের মতো সাময়িক বেদনা কাটিয়ে উঠল। কিন্তু, যারা দীর্ঘদিন এই হতাশা লালন করে তারা যে আত্মহত্যা করবেনা এই নিশ্চয়তা কোথায়?
আর যদি আত্মহত্যা না-ও করে তারা যে দিনের পর দিন হতাশ জীবনযাপন করে অজান্তে মূল্যবান জীবনটা নষ্ট করে ফেলছে, সেটা ঠেকাবে কে?

এই  হতাশাগ্রস্থ টিনএজদের  দায়িত্ব নিবে কে? হতাশদের পাশে দাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে, মুচকি হাসি দিয়ে এদেরকে সাদরে গ্রহণ করে আগামীর কাজী নজরুল তৈরি  করবে কে? এই দায়িত্ব কার? সরকার, প্রশাসন, শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, নাকি সাংবাদিকদের? কার?

আমরা কবে দেখতে পাব, সকল শ্রেণীর মানুষ হতাশ শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়িয়ে বলবে,আয় আমান আয়! এ প্লাস পাসনি,তবুও আয় মিষ্টি খা!

তাই শেষ পর্যন্ত মনে এখনো প্রশ্ন জাগে, হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে কে??#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.