হজ্বের প্রস্তুতি সম্পন্ন : হজ্ব যাত্রীরা সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে

ছবি: সংগৃহীত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর শুধুমাত্র সৌদি আরবে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও দেশটির নাগরিকদের সমন্বয়ে ১০ হাজার মানুষ হজ্ব পালন করবেন। তারপরও প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের কমতি নেই সৌদি কর্তৃপক্ষের।

আজ রবিবার (১৯ জুলাই) থেকে এবারের হজ্বে অংশ নেওয়া হজ্ব যাত্রীরা সাতদিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ধাপ শুরু হলো।

সাতদিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩ জিলহজ্ব মক্কায় এসে আরও চারদিনের কোয়ারেন্টিন করবেন হজ্ব যাত্রীরা। এরপর ৮ জিলহজ্ব বাদ ফজর রওয়ানা হবেন মিনায়। মিনাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দান ও মক্কায় হজ্বের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।

চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে হজ্বযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা স্বার্থে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই পদক্ষেপের আওতায় প্রত্যেক হজ্বযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন।

আজ রবিবার (১৯ জুলাই) ভোর থেকে মক্কার নির্দিষ্ট এলাকাসহ মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব স্থানে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে তাকে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। এসব এলাকার প্রবেশ পথে কড়া নিরাপত্তা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সড়কে টহল দিচ্ছেন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৯ কিংবা ৩০ (৮ জিলহজ্ব) জুলাই থেকে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, চলবে পাঁচদিন। হজ্বের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের বিধিনিষেধ জারি থাকবে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে হজ্বযাত্রীদের মধ্যে যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত হজ্বযাত্রীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে। এসব সামগ্রীর বাইরে অন্য কিছু বহন করতে পারবে না হজযাত্রীরা। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চিপ লাগানো একটি স্মার্ট ব্রেসলেট, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, জামারাতে নিক্ষেপের জন্য জীবাণুমুক্ত কঙ্কর, জুতা, ফোনের চার্জার, জায়নামাজ, জুতার ব্যাগ, হাতব্যাগ এবং হজের বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক বই-পত্র ও স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত হজ নির্দেশিকা।

যাতায়াতের জন্য প্রতি ২০ জন করে একটি দল করা হয়েছে। প্রত্যেক বাসে ২০ জন করে হজ্বযাত্রী চলাফেরা করবেন।

এদিকে মিনা, জামারাত, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে যে অংশ হাজিরা অবস্থান করবেন, সেসব স্থান জীবাণূমুক্ত করা হয়েছে। মসজিদুল হারামের ভেতরে ও বাইরের অংশে নামাজের কাতারে নামাজের সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে।

এবার হাজিরা মিনার তাঁবুতে থাকবেন না। মিনার নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে তারা অবস্থান করবেন। এ ছাড়া তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদে চুমো দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে তাওয়াফ ও সায়ী সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফের সময দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নামাজের জামাতেও দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। সর্বাবস্থায় হজযাত্রীদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।

হজ্বযাত্রীরা বাইরে থেকে কোনো প্রকার খাবার বা পানীয় নিয়ে হজের রীতিনীতি পালন করতে পারবেন না। সব হাজির জন্য খাবার ও পানি কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করবে।

কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো হজ্বযাত্রী নিজে কোরবানির পশু ক্রয় কিংবা জবাই করতে পারবেন না। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত পরিবহন শ্রমিক, খাবার সরবরাহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হজ্বযাত্রী ও হজ্ব ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে। কারও মাঝে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে।

হারামাইন প্রেসিডেন্সি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবারের হজ্বের খুতবা পাঁচ ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করার। ভাষাগুলো হলো- ইংরেজি, ইন্দোনেশিয়ান, উর্দু, ফ্রেঞ্চ ও ফারসি।

হজ্ব একটি ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ্ব পালন ফরজ। হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে- ৮ জিলহজ্ব জোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় ও রাতযাপন। এটা সুন্নত আমল।

৯ জিলহজ্ব আরাফাতে অবস্থান করা ফরজ। ওইদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা এবং মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করা। মুজদালিফায় অবস্থান ওয়াজিব। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে মিনায় পৌঁছে বড় শয়তানের প্রতি সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা।

তামাত্তু বা কিরান হাজ্বি হলে হজের কোরবানি আদায় করা। মাথা মুণ্ডানো ও ইহরামমুক্ত হওয়া। ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে মক্কায় গিয়ে (হজের ফরজ তথা রুকন) তাওয়াফে জিয়ারত করা।

১১ জিলহজ্ব সূর্য দুপুরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে প্রথমে ছোট তারপর মেজ অতঃপর বড় শয়তানের প্রতি সাতটি করে পরপর ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ ও ১১ জিলহজ্ব দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।

১২ জিলহজ্ব সূর্য দুপুরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে ১১ জিলহজের নিয়মে তিন শয়তানের প্রতি ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে মক্কা মোকাররমার উদ্দেশে সূর্যাস্তের আগে মিনার সীমানা ত্যাগ করা। ১২ জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করে ১৩ জিলহজ্ব ১১ ও ১২ জিলহজ্বের মতো তিন শয়তানের প্রতি ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা সুন্নত।

কিন্তু ১২ জিলহজ্ব মিনা ত্যাগ করা প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব হজ্বের কার্যক্রমে ১৩ তারিখের কথা তেমন আসে না। এ বছর সীমিত হজ্ব আয়োজনে সৌদি আরব ছাড়াও থাকছে ১৬০ দেশের নাগরিকদের অংশগ্রহণ করছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.