হজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রার্থনা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ বিশ্বের ১৫ লাখের বেশি হাজি সমবেত হয়েছেন আরাফাতের ময়দানে। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত বিশাল এ জমায়েতে ফিলিস্তিনের নিপীড়িতদের জন্য সাহায্য প্রার্থনাসহ সারাবিশ্বের মুসলিমদের গুনাহ মাফ ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করবেন তাঁরা।
তাঁদের সবার মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই। আমি হাজির। সব প্রশংসা ও অনুগ্রহ শুধুই তোমার।
সব রাজত্ব তোমার।
স্থানীয় সময় আজ শনিবার (১০ জিলহজ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদে নামিরায় জোহর ও আসরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হজের খুতবা শুরু করেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মক্কা নগরীর উপ-গভর্নর ও কেন্দ্রীয় হজ কমিটির উপ-প্রধান প্রিন্স সাউদ বিন মিশআল, সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ও সিনিয়র স্কলারস কমিটির প্রধান শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শেখ, ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রী শায়খ ড. আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আলে শেখ, মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মবিষয়ক প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আল-সুদাইসসহ দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
আরাফাতের দিনের গুরুত্ব তুলে ধরে শায়খ মাহের আল-মুয়াইকিলি বলেন, ‘আরাফার স্থান ও সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি। মহান আল্লাহ এখানকার হাজিদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। তাই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজের সব আমল করা উচিত। আজকের দিনের সব আমলের সওয়াব অনেক গুণ বৃদ্ধি করা হয়। আর অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।
রাসুল (সা.) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেছেন। ওইদিন তিনি রোজা রাখেননি। যেন জিকির, দোয়াসহ অন্যান্য ইবাদত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সহজ হয়। মহান আল্লাহ সুরা আরাফের ৫৫ নং আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে বিনয়ের সঙ্গে ও গোপনে দোয়া কোরো, নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।… তোমরা তাঁর কাছে ভয় ও আশা নিয়ে দোয়া কোরো।’
হজের খুতবায় ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জন্য দোয়া করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মুসলিমরা যুদ্ধে বিপর্যস্ত। তাদের জন্য দোয়া করা সারাবিশ্বের মুসলিমদের কর্তব্য। যারা ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা করেছেন বা চেষ্টা করছেন, তাদের জন্যও দোয়া করা কর্তব্য।’ এ সময় তিনি সমবেত হাজি ও সারাবিশ্বের মুসলিম নারী-পুরুষদের গুনাহ মাফ চেয়ে দোয়া করা হয়। বিশেষত সৌদি বাদশাহসহ শাসকগোষ্ঠী ও হজ আয়োজক সংশ্লিষ্ট সবার কল্যাণ কামনা করা হয়।
হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। হজের অংশ হিসেবে জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ—এই পাঁচ দিনে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে হজযাত্রীরা হজের কার্যক্রম পালন করবেন। এর মধ্যে স্থানীয় সময় আজ শনিবার (৯ জিলহজ) আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে পড়বেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থাকবেন। সূর্যাস্তের পর সবাই আরাফাত থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত্রিযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে তিন জামারার জন্য তাঁরা পাথর সংগ্রহ করবেন।
এরপর আগামীকাল রবিবার (১০ জিলহজ) তাঁরা মুজদালিফা থেকে সংগৃহীত পাথর মিনায় গিয়ে তিনটি জামারায় নিক্ষেপ করবেন। এরপর কোরবানি করে মাথা ন্যাড়া করবেন। এরপর ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবাঘর সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় ফিরে যাবেন। সেখানে তাঁরা দুই দিন বা তিন দিন (১১ থেকে ১২ বা ১৩ জিলহজ) (বড়, মধ্যম, ছোট) জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
এদিকে কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হচ্ছে। টানা পঞ্চম বছরের মতো এবারও বাংলাসহ ২০টির বেশি ভাষায় অনুবাদ সম্প্রচার করা হয়। এ বছর এর বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.