স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রাজশাহী নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নগরীতে চালু হয়েছে অসংখ্য ভাজা-পোড়ার দোকান। এ সমস্ত দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় তৈরি হচ্ছে ট্রান্স ফ্যাট চর্বিযুক্ত খাবার। পোড়া তেলে ভাজা খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খেলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসারসহ সকল ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। এছাড়া হতে পারে জটিল রোগ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রজেক্ট ডাইরেক্টর রেজাউল করিম (এসএসও বিসিএসআইআর) বলেছেন, ট্রান্স ফ্যাট এক ধরনের ক্ষতিকর চর্বি যা তেলে ভাজা খাবারকে মচমচে করে এবং তা বেশিক্ষণ ধরে রাখে।

ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত চর্বিতে ভাজা খাবারের স্বাদ বাড়ায়। এটি হাইড্রোজিনেটেড অয়েল নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি হিসেবেও পরিচিত। অতিরিক্ত ভাজার ফলে ঐ সব তেলে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয় যা স্বাসে’্যর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একই তেলে বারবার ভাজলে তাতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়।

বেশি পরিমাণ ট্রান্স ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। নিয়মিত ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে এবং ভাল কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে যায়। যার কারণে রক্তণালীতে চর্বি জমাট বাঁধে। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্য গ্রহণকারী ব্যক্তির সু’লতা ও স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি করোনারি হার্ট ডিজিজ-এ আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ।

ট্রান্স ফ্যাট পশুর মাংস, দুধেও পাওয়া যায়। তবে কৃত্রিম ট্রান্স ফ্যাটের চেয়ে এতে ক্ষতির পরিমাণ থাকে কম। এতে মাত্র ১% ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এটি সব থেকে কম ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট। তবে এ ধরনের ট্রান্স ফ্যাট অসম্পৃক্ত তেলের সাথে হাইড্রোজেন যোগ করে সম্পৃক্ত করা হলে যা তৈরি হয় তা সাধারণ তাপ মাত্রায় জমাট বাঁধে। সাধারণতঃ বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দুই বা তিন বারের অধিক পোড়ানো তেলে যে কোন খাবার ভাজা হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিজ্ঞান ও গবেষণার আরেক কর্মকর্তা এস ও রুহুল আমিন। তিনি বলেন, যারা বারবার ভাজা পোড়ায় ব্যবহৃত তেল দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ায় তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

কোন তেল দুই বা তিন বার পোড়ালে ঐ তেলের আর গুণাগুণ থাকে না। এতে মারাত্মক ক্ষতিকর কেমিক্যাল তৈরি হয়। আর ভাজা পোড়া তৈরিতে যে সব কেমিক্যাল মিশানো হয় তাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমন কি এতে স্টমাচে ক্যান্সারে হবার ঝুঁকিও রয়েছে বলে তিনি জানান।

এসব ট্রান্স ফ্যাট সাধারণতঃ একই তেলে বারবার ভাজা খাদ্যে যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চপ, চানাচুর, সিঙারা, পিয়াজুঁ প্রভৃতি খাদ্যে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া বেকারী খাবার যেমন ফাস্টফুড, ক্রোকারিস, টোস্ট বিস্কুট প্রভৃতিতে তৈরিতে ডালডা বা ট্রান্স ফ্যাটসমৃদ্ধ তেল ব্যবহৃত হয়।

অথচ এর পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া তেলের তৈরি খাদ্য। যা স্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তা জেনেও অবাধে খেয়ে চলেছেন ছাত্র, যুবক ও সাধারণ মানুষ। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ছেয়ে গেছে ভাজা-পোড়া খাবারের দোকানে। রমজান মাসকে সামনে রেখে এটা আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে। ফ্যাট চর্বিযুক্ত তেলে ভাজলে খাদ্য সুস্বাদু মচমচে থাকে।

তাই রোজা আসলেই ইফতারি হিসেবে চর্বিযুক্ত ভাজাপোড়া খাবারের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে অনেকেই। এটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত পোড়া তেলে ভাজা খাবারে ক্যান্সার ও পেটের পীড়াসহ জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শুধু ক্যান্সার নয়, এতে ব্রেন স্ট্রোক, হাঁপানি, এমনকি ডাইবেটিসের মত রোগও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

যে কোন মানুষের জন্য অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভাজা-পোড়া নয় ফল-মূল খেয়ে ইফতারি করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এরপরও মানুষ খেয়ে চলেছে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর পোড়া তেলে ভাজা খাবার। নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভাজাপোড়া তেলে তৈরি পিয়াজু, বার্গার, চপসহ অন্যান্য খাবার। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিকর জেনেও মানুষ তা অহরহ খাচ্ছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, অতিরিক্ত পোড়া তেলে ভাজা-পোড়া খেলে হাট স্ট্রোক, হাইপার টেনশান, ডায়াবেটিস, ডিসেন্ট্রি হেপাটাইটিস ‘এ’, কলেরা এবং দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সার হতে পারে। আর রাস্তার ধারে অস্বাস’্যকর পরিবেশে খাবার খেলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.