স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায় : শিল্পমন্ত্রী

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বর্তমান সরকারের অবদানের ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন তথা দেশের উন্নয়ন হয়েছে। সামনেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের বিকল্প নেই। স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, পুরস্কারপ্রাপ্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা।
এই ধরনের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এই স্বীকৃতি দেশে শিল্প খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। বাঙালি জাতিকে আত্মনির্ভরশীল ও শিল্পসমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি সবসময় বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর লক্ষ্যে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এ অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। অসীম দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপায়নের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন। গত এক দশকে দেশে অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, যা গত বছরের ২৫ জুন তারিখে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা আরেকটি মাইলফলক অর্জন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। আমরাও সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তার সঙ্গে ছিলাম।
এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার মতো স্থাপনার সুফল অচিরেই মানুষ ভোগ করবে- বলেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আনার লক্ষ্যে আমাদের সরকার পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আমাদের জিডিপি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মধ্যম আয়ের এই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগাতে হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহ প্রদান করে বর্তমান সরকার বরাবরের মতই সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে। এই শিল্প পুরষ্কারের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়াসহ জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ছয় ক্যাটাগরির জন্য মোট ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ দেওয়া হলো। বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে পাঁচটি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে পাঁচটি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে চারটি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে একটি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে দুটি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে রানার অটোমোবাইলস লি. এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.। যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ও ফারিহা স্পিনিং মিলস্ লি.। এনভয় টেক্সটাইল লি. তৃতীয় হয়েছে।
মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম নোমান টেরি টাওয়াল মিলস্ লি., যৌথভাবে দ্বিতীয় মাসকোটেক্স লিমিটেড ও এপিএস ডিজাইন ওয়ার্কস লি.। যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস্ লি. ও অকো-টেক্স লি.।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম মাসকো ওভারসিজ লি., যৌথভাবে দ্বিতীয় আব্দুল জলিল লি. এবং প্যাসিফিক সি ফুডস লি., তৃতীয় মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস্ লি.।
মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে। এটি হলো মাসকো ডেইরি এন্টারপ্রাইজ। কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে ইন্টেলিজেন্ট কার্ড লি. এবং দ্বিতীয় হয়েছে রং মেলা নারী কল্যাণ সংস্থা (আর এন কে এস)। হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লি., দ্বিতীয় হয়েছে মীর টেলিকম লি. এবং ৩য় সার্ভিস ইঞ্জিন লি.।
শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে প্রথমবারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ দেওয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ষষ্ঠবারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ দেওয়া হলো। সম্প্রতি সরকার ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.