স্বপ্ন আটকে দিয়েছে দারিদ্রতা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: জাহিদ ইসলাম। ৬ মাস বয়সেই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তারপর আশ্রয় হয় সৎ মায়ের সংসারে। কিন্তু সেই সংসারেও থাকা হয়নি জাহিদ ইসলামের। ৯ বছর বয়সে সৎ মায়ের সংসার ছাড়তে হয় তাকে।
বাবা-মা কেউই তার খোঁজ খবর না নেয়ায় খেয়ে না খেয়ে নানার বাড়িতে থেকেই বড় হতে থাকে জাহিদ। তার নানা আব্দুল মজিদ দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালায়। এই কষ্টের মাঝেও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি জাহিদ।
জেএসসি ও এসএসসির ফরম পুরনের টাকা তার নানা দিতে না পাড়ায় স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় ফরম পুরন করা হয়েছিল তার। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সে এবারে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এমনি আর এক মেধাবী ছাত্র শাহিনুর ইসলাম সোহান। বাবা ইলেকট্রিকের কাজ করে ৬ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগায়। পরিবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এর মধ্যে ৩ ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য। খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টের মাঝে লেখাপড়া করে সেও এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
জাহিদ ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার আব্দুল মজিদের নাতি ও আলহাজ্ব শমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। শাহিনুর ইসলাম সোহান একই উপজেলার পূর্ব বেজগ্রাম এলাকার আবু কালামের পুত্র ও আলহাজ্ব শমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
জাহিদের নানা আব্দুল মজিদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জাহিদ ছোট থেকেই আমার সংসারে বড় হয়েছে। তার বাবা-মা তার কোন খরচ বহন করে না। আমি বুড়ো মানুষ দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। অনেক সময় আমার নিজের খরচই জোগাতে পারি না। এর মাঝে জাহিদের লেখাপড়ার খরচ কিভাবে চালাবো। এই কষ্টের মাঝেও জাহিদ তার লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। জাহিদ অনেক ভালো ছাত্র সে সহযোগীতা পেলে তার স্বপ্ন পূরন করতে পারবে।
জাহিদ ইসলামবিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে  বলেন, অনেক ছোট থাকাতেই বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই নানা-নানীর কাছে বড় হয়েছি। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়েছি। এখন আমার নানার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে কি আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমার স্বপ্ন ছিল ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এখন আমার স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই থেকে যায়।
শাহিনুর ইসলাম সোহানের বাবা আবু কালাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমি কারেন্টের মেকারী করে যা আয় করি তাতে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। আমার ছেলে সত্যিই অনেক মেধাবী। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমি তার লেখাপড়ার খরচ বহন করতে পারছি না।
শাহিনুর ইসলাম সোহান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অভাব অনটনের মাঝে নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য এ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার বাবার পক্ষে আর খরচ যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বপ্ন ছিল ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিন্তু আমার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। আমি এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারবো কিনা জানিনা।
আলহাজ্ব শমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বাবলু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জাহিদ ইসলাম ও শাহিনুর ইসলাম সোহান দু’জনেই অত্যান্ত মেধাবী ও দরিদ্র ঘরের সন্তান। এসএসসিতে ফরম পুরনে জাহিদ ইসলামকে আমি সহযোগিতা করেছিলাম। আমার বিশ্বাস তারা সহযোগিতা পেলে তাদের স্বপ্ন পূরন করতে পারবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.