সৌন্দর্যমন্ডিত রাবির প্যারিস রোড

নিজস্ব প্রতিবেদক: পিচঢালা পরিষ্কার প্রশস্ত পথ। গগনশিরীষ নামের অসংখ্য সুউচ্চ গাছ সারিভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছ পথের দু’পাশে। একপাশের গাছগুলো যেন আরেক পাশের গাছগুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। কখনো সূর্যের আলো সবুজ পাতা ভেদ করে রাস্তায় আছড়ে পড়ছে আবার কখনো পাতায় আটকে অন্য রকম আভা ছড়াচ্ছে।
গাছগুলোর নিচ দিয়ে রয়েছে বিস্তৃত সুবিশাল পথ। ঠিক যেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কোন এক রাস্তা। একারণে সকলের কাছে রাস্তাটি প্যারিস রোড নামে পরিচিতি পেয়েছে। এমন এক অদ্ভূত সৌন্দর্যের উপমা হয়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যমন্ডিত রাস্তা প্যারিস রোড।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সামনে পড়বে কারুকার্যে খচিত সুবিশাল আয়তনের জোহা চত্বর। চত্বর সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন। আর পশ্চিম দিকে সুবিস্তৃত সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল গাছের সমাহার। গাছগুলো যেন প্যারিস রোডকে চাদরে আবৃত রেখেছে।
রাস্তার একপাশে রয়েছে গোলাপ এবং জবা ফুলের সারিবদ্ধ বেশ কিছু গাছ। আর অন্য পাশে হাঁটার জন্য ছোট ফুটপাত। ভিন্ন ঋতুতে এই রাস্তা সাজে বাহারি রূপে। তবে শুধু ঋতু পরিবর্তনেই নয়, একেক সময় একেক সাজে রাস্তাটি ভিন্ন সৌন্দর্য ধারণ করে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কিংবা রাতে আড্ডা, গান, গল্প ও নানা মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে সবার ভালোবাসার এ ‘প্যারিস রোড’।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের কাজলা রোড থেকে শেরেবাংলা হল পর্যন্ত এই গগন শিরীষ গাছ লাগানো হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে কিছু গাছ নিয়ে আসেন। তিনি এ গাছগুলো রোপণের দায়িত্ব দেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী মোহাম্মাদ ইউনুসকে। তাঁর হাত ধরেই লাগানো হয় গাছগুলো। তখন এটি ছিল বৃক্ষরোপণের একটি উদ্যোগ।
তবে প্রথম দিকে এর নাম প্যারিস রোড ছিল না। নামের প্রচলনটা মূলত শুরু হয় ৮০’র দশকের পর থেকে। রাস্তাটির সঙ্গে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তাগুলোর অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
একে প্যারিস রোড বলতে থাকেন। সেই থেকে রাস্তাটি প্যারিস রোড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর এখন এই রাস্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আড্ডারও অন্যতম স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো অনুষ্ঠানে এই রাস্তা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় আলপনা, ছবি তোলার ভিড় জমে যায় পুরো পথজুড়ে। রাজশাহীতে প্রেমের পথ হিসেবে পরিচিত এই প্যারিস রোড। এতো বছরের পুরনো এই প্যারিস রোড বহন করে চলেছে অনেক কালের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
প্যারিস রোডের সৌন্দর্যের বিষয়ে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে দেখার মত অনেক জায়গা থাকলেও প্যারিস রোডের মত কোনো রাস্তাই আমার মনে এতো জায়গা করে নিতে পারেনি। সারাদিনের ক্লাস শেষে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটলে শীতল বাতাসের সাথে সব ক্লান্তি যেন মিলিয়ে যায়। আর বৃষ্টির দিন হলে তো কথাই নাই।’
শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের কাছেও রাস্তাটি হয়ে উঠেছে একটি প্রাণের জায়গা। যে কেউ এই রাস্তায় আসলে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে রাস্তাটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। তবে এই রাস্তায় একবার আসলে ক্যামেরাবন্দি হয়ে স্মৃতি ধরে রাখতে কেউই ভুলেন না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.