বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মঙ্গলবার সাত বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজকে আতিথ্য দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে হোয়াইট হাউসে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। বেশ কয়েকটি কারণে এই সফর রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার প্রিন্স মোহাম্মদের জন্য লাল গালিচা বিছিয়েছে। ট্রাম্প তাকে মার্চিং ব্যান্ড, পতাকাবাহী ঘোড়সওয়ার এবং একটি সামরিক ফ্লাইওভারের মাধ্যমে স্বাগত জানান।
আতিথেয়তার এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন এটিই ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যকে পেতে চান, যা এই অঞ্চলের মিত্রদের সাথে আর্থিক বিনিয়োগ এবং মার্কিন অংশীদারিত্ব দিয়ে পরিচালিত হবে, বিশেষ করে সৌদি আরব।
যুবরাজ মোহাম্মদের আগমনের পর, তিনি এবং ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দুই নেতা ব্যবসায়িক সুযোগ, শান্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তি ব্যবসা নিয়ে কথা বলেন।
এছাড়া ট্রাম্প-যুবরাজ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে ইতিমধ্যেই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্কসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলো এসেছে।
বৈঠকের মূল বিষয়গুলো এখানে দেওয়া হল:
১.সৌদি আরব-ইসরাইল সম্পর্ক নিয়ে ভালো আলোচনা:
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি সৌদি আরবকে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদান করাতে চান, যা ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
মঙ্গলবার, যুবরাজ মোহাম্মদ এবং ট্রাম্প সম্ভাব্য চুক্তির বিস্তারিত বা সময়সীমা না জানিয়েই এই বিষয়ে সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দেন। তবে, ক্রাউন প্রিন্স পুনর্ব্যক্ত করেন, রিয়াদ একটি সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে দেখতে চায়।
সাংবাদিকদের যুবরাজ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক থাকা ভালো, এবং আমরা আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চাই। কিন্তু আমরা এটাও নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি স্পষ্ট পথ নিশ্চিত করতে পারি।’
২. সৌদি আরবের জন্য প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র মর্যাদা এবং একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি
হোয়াইট হাউসে সৌদি নেতার জন্য আয়োজিত ডিনারে ট্রাম্প রিয়াদকে ন্যাটো বহির্ভূত ‘প্রধান’ মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন।
এই মর্যাদা অনুযায়ী কোনো দেশকে উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থার যে বিস্তৃত লাইসেন্সিং প্রোটোকলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা ছাড়াই মার্কিন সামরিক হার্ডওয়্যার, বিক্রয় এবং অন্যান্য সহযোগিতা দ্রুত অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। আরও ১৯টি দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্ক রয়েছে।
আলাদাভাবে, হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, ট্রাম্প এবং যুবরাজ একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন যা ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করে এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রতিরোধকে শক্তিশালী করবে।
৩. ট্রাম্প বলেছেন ইরান চুক্তি চায়
জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় ট্রাম্প আবারও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সকলের পক্ষ থেকে এটি করেছি, এবং ফলাফল অসাধারণ ছিল কারণ আমাদের কাছে সেরা পাইলট, সেরা সরঞ্জাম, সেরা বিমান, সেরা সবকিছু আছে।’
পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের প্রতি নরম স্বরে বলেন, তেহরান ওয়াশিংটনের সাথে একটি কূটনৈতিক সমাধান চাইছে, যা করতে হলে তার পারমাণবিক কর্মসূচি ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প বলেন, তারা এটির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
৪. ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ?
দুই নেতার প্রকাশ্য বক্তব্যের শুরুতেই, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের প্রত্যাশিত বিনিয়োগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যা শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়াগ হতে পারে।
‘আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছেন।’
যেহেতু তিনি আমার বন্ধু, এই বিনিয়োগ হয়ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে, সৌদি যুবরাজের পক্ষ থেকেও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্ভবত ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
৫. প্রশংসা আর হাসি
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে যুবরাজ আসার পর থেকেই ট্রাম্প এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের মুখে হাসি ছিল। এক পর্যায়ে, ট্রাম্প যুবরাজ মোহাম্মদের হাত ধরেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি যুবরাজকে চমৎকার এবং প্রতিভাবান বলে বর্ণনা করেন। বলেন, ‘আজ ওভাল অফিসে আমাদের একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি আছেন, এবং আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু – আমার খুব ভালো বন্ধু।’ #

















