সৌদিতে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি জাতীয় সংসদে

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী গৃহকর্মীদের শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় অবিলম্বে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ এ দাবি জানান। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আপনাদের থেকে সরকার বেশী চিন্তিত। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক পাঠানো হয়, তারা যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। দেশের সম্মান রক্ষায় নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না।

এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, আপনারা বিষয়টি নিয়ে যতটুকু চিন্তিত, তারচেয়ে বেশী সরকার চিন্তিত। যারা শ্রমিকদের পাঠান, তারা কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়েই নারী শ্রমিকদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে তারা নানা রকম হয়রানির শিকার হন।

‘ইতোমধ্যে আমরা এ ব্যাপারে ঢাকায় সৌদি আরবের দায়িত্বরত কনস্যুলার আছেন, তাদের কাছে নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছি। সৌদি আরবে দায়িত্বরত আমাদের কর্মকর্তাদের খবর নিতে বলা হয়েছে। নির্যাতন, অত্যাচারের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। চলতি মাসের ২৬-২৭ তারিখে সৌদি আরবে দু’দেশের বৈঠকে এসব বিষয় তুলে ধরা হবে। এছাড়াও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যাতে নারী শ্রমিকদের কম করে হলেও একমাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠায়, সে ব্যাপারেও বলা হয়েছে।’

এসময় সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে পাঠানোর কথা বলছেন, কিন্তু সেইখানে যে সমাজ ব্যবস্থা সেটা আপনি কন্ট্রোল করবেন কীভাবে। নারী না পাঠিয়ে পুরুষ শ্রমিক পাঠান। তা না হলে যেভাবে আমাদের নারী শ্রমিকরা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাতে দাসত্বের বাংলাদেশে পরিণত হবে।

উত্তরে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, সবকিছু যেভাবে চিন্তা করা হয়, সেভাবে করা যায় না। ওনারা যা চায় সেভাবে পাঠাতে হবে। মানুষ চাইলে তো মানুষ পাঠাবো। না হলে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে।

এরপর মুজিবুল হক চুন্নু নারী কর্মীদের ইজ্জত রক্ষার জন্য কোনো রকম উদ্যোগ নিয়েছেন কী না জানতে চাইলে জবাবে মন্ত্রী বলেন, গৃহকর্মীর ব্যাপারে আপনারা যত চিন্তিত এরচেয়ে বেশী কিন্তু সরকারই চিন্তিত। সেই ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগেই এখানে সৌদি আরবের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ারর্স ওনাকে আমার অফিসে ডেকেছিলাম। বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। রিয়াদে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, ওখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়গুলো উত্থাপনের জন্য। আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর সৌদি আরবে যৌথসভা হবে, সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ক্লেইম যে আছে, নির্যাতনের ক্লেইম যেটা আছে, কেন নির্যাতিত হয় এবং এখান থেকে যে সব নারীকে পাঠাই কোনো ব্রিফিং না দিয়ে কোনো ট্রেনিং না দিয়ে, কিছু না দিয়ে আমরা গৃহকর্মী বলে রিক্রুটিং এজেন্টরা পাঠিয়ে দেয়। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এরপর গৃহকর্মী যারা যাবে তাদের কমপক্ষে এক মাসের ট্রেনিং দিতে হবে। যাতে ওখানে গিয়ে নির্যাতিত না হয়। ওদের হক এবং ওদের সুরক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ওনারা নিতে পারেন।

এরপর কাজী ফিরোজ রশিদ সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নির্যাতনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেখানে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন হয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব কী। তারা চায় আমরা পাঠিয়ে দেই। তারপরে অত্যাচারের শিকার ও লাশ হয়ে ফিরে আসে। সেখানে যে পোস্টমর্টেম করা হয়, তাতে বলা হয় স্বাভাবিক মৃত্যু। এ বিষয়গুলো মন্ত্রী কোনো খবর রাখেন না। বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো খবর রাখে না। তারা তাদের মতো রিপোর্ট দেয়। আমাদের দূতাবাস এগুলো দেখে না। মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য আমাদের মা-বোনদের এভাবে বিদেশে পাঠাতে পারি না। সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। দালালরা নারী শ্রমিকদের নিয়ে সেখানে বিক্রি করে। এজন্য আমরা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ চাই।

এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, মাঠের বচন সুন্দরই লাগে। মন্ত্রী কী করেন, কী করেন না সেটা কেউ দেখে না। এটা মাঠের বক্তব্যের মতো গতানুগতিক কোনো কাজ না। ইতোমধ্যে আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। ১৬০ এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত রাখা হয়েছে। একটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। যাদের পাঠানো হবে, সেখানে তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.