সৈয়দপুরে ১৫শ’ পরিবার ভিজিএফ’র চাল না পাওয়ায় ইউপি চত্বর ঘেরাও করে বিক্ষোভ

নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুর ভিজিএফ’র চাল নিতে গিয়ে স্লিপ জমা দিয়েই চাল পায়নি প্রায় ১ হাজার ৫শ’ হতদরিদ্র মানুষ। স্লিপ জমা দেয়ার পর ৫ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল না পেয়ে স্লিপ ফেরত বা চাল দেয়ার দাবিতে পরিষদ ঘেরাও করে রেখেছে ইউনিয়নবাসী।

চেয়ারম্যান চাল বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় অবস্থা বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব সটকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে ৪ শ’ জনকে চাল দেয়ার আশ্বাস দিলেও বিক্ষুব্ধ জনতা তা মানতে নারাজ।

তারা স্লিপ জমা নিয়ে চাল না দিয়ে স্লিপ পুড়িয়ে ফেলা ও চাল বিক্রির অভিযোগ তুুলে চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবি করেন। সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে আজ বুধবার (২৯ জুলাই) সকালে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

এলাকাবাসী জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ৩ দিন যাবত পরিষদে ৯ হাজার ৯৯৮ জন হতদরিদ্রের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার সকাল ৭ টায় পরিষদ চত্বরে এসে উপস্থিত হয় চালের স্লিপপ্রাপ্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষ। তাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ইউপি সচিবের নেতৃত্বে চেয়ারম্যানের লোকজন প্রত্যেকের কাছ থেকে স্লিপ তুুলে নেন।

কিন্তু এক ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও চাল দেয়া শুরু না করায় উপস্থিত লোকজনের মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তারা দ্রুত চাল দেয়ার জন্য চাপ দিলে জানানো হয় যে, যত লোক এসেছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চাল নেই। তাই নতুন করে চাল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপরও প্রায় ২ ঘন্টা পার হয়। তবুও চাল দেয়ার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এতে জনতার মাঝে সন্দেহ দানা বাধে। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নতুন করে কোন চাল আনা হবেনা। বরং তাদের কাছ থেকে স্লিপ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং চাল দেয়া হবেনা। এসময় জনগণ আবারও চাপ দিলে জানানো হয় আপনারা বাড়ি বাড়ি চলে যান। চাল আসলে আপনাদেরকে পরে দেয়া হবে।

এতে লোকজন তাদের স্লিপ ফেরত দেয়ার দাবি জানালে বলা হয়, আমাদের কাছে লিষ্ট আছে সে অনুযায়ী সবাই চাল পাবেন। এ কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে উপস্থিতরা। এসময় ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন যে, বরাদ্দকৃত চাল শেষ হয়ে গেছে। চালের পরিবর্তে প্রত্যেককে ১৫০ টাকা করে দেয়া হবে তা নিয়ে চলে যান।

তখন পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। অবস্থা বিরুপ আঁচ করতে পেরে কৌশলে ইউপি সচিব মোঃ রহিদুল ইসলাম ও চেয়ারম্যান মোঃ এনামুুল হক চৌধুরী সটকে পড়েন। এখবর ছড়িয়ে পড়লে চাল বিতরণে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্র্মকর্তাকে আটকে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বাধ্য হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আবু হাসনাত সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা ইউপি চত্বরে অবস্থান করছিল।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন যে, স্লিপ প্রতি ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। তারপরও সবাই কেন চাল পাচ্ছেনা। চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া নিজস্ব লোকদেরকে স্লিপ দিয়ে চাল উত্তোলন করেও পাচার করা হয়েছে। একারণে এখন স্লিপধারীরাও চাল পাচ্ছেনা।

তারা বলেন, ট্যাগ অফিসার যোগসাজশ করে এমন পরিস্থিতি দাঁড় করিয়েছে। তার উপস্থিতিতেই কার্ড প্রতি ২ কেজি চাল কম দেয়া হলেও ট্যাগ অফিসারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে সচিব মোঃ রহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রায় ৪শ’ পরিবারের তালিকা আমরা করেছি। এই লোকগুলো চাল পায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক চৌধুরী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মাত্র ১ থেকে দেড়শ’ মানুষ চাল পায়নি। তাদেরকে আগামীকাল চাল দেয়া হবে। স্লিপ নিয়ে পুুড়িয়ে ফেলা ও উপস্থিতদের ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ ধরণের কিছুই করা হয়নি। আমরা কয়েকটি ইয়াতিমখানায় চাল দিয়েছি। তাই হিসেবটা একটু এদিক ওদিক হতে পারে। কিন্তু তাই বলে ৪শ’ জন চাল পাবেনা।

উপস্থিত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মূলতঃ বরাদ্দ অনুযায়ী চাল দেয়া হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এখন আর মাত্র ৪ জন চাল পাবে। কিন্তু উপস্থিত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার লোক। এত লোকের চাল তো মজুদ নেই। বরাদ্দ অনুযায়ীই তো স্লিপ দেয়া হয়েছে। তাহলে কেন স্লিপধারীরা চাল পাচ্ছেনা। এই প্রশ্রনের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি জানিনা। চাল কিভাবে শেষ হয়েছে তাও আমার জানা নেই।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোখছেদুুল মোমিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এবার উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ভিজিএফ’র চাল এলএসডি গোডাউন থেকে একযোগে উত্তোলন করতে হবে এবং তা ২/৩ দিনে বিতরণ করবে ইউপি চেয়ারম্যানরা।

সে অনুযায়ী ২৭ জুলাইয়েই চাল ইউপি ভবনে চলে গেছে। কিন্তু তারপরও ২৯ জুলাই এসেও মানুষ চাল পাচ্ছেনা। এটাই প্রমান করে যে অসৎ উদ্দেশ্যে চাল পাচার করা হয়ে থাকতে পারে। অবশ্যই তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, খবরটা জানার পর ট্যাগ অফিসারের কাছে জানতে চাই কি কারণে বিক্ষোভ হয়েছে? তিনি বলেছেন সাড়ে ৩ শ’ পরিবার স্লিপের চাল পায়নি। কেন পায়নি এর জবাবে তিনি বলেছেন চাল শেষ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মৌখিক কোন মন্তব্য গ্রহণ করা হবেনা বলে ট্যাগ অফিসারের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নীলফামারী প্রতিনিধি এম কে আনোয়ার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.