সেনাবাহিনীর সঙ্গে নেতানিয়াহুর বিরোধের নতুন ইঙ্গিত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের বিরোধের নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস অজ্ঞাত সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চায় ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্ব। এমনকি এতে যদি আপাতত হামাস ক্ষমতায় থাকেও। তবে নেতানিয়াহু এই প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ৯ জন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৯ জন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তারা বলেছেন, সামরিক কর্মকর্তারা মনে করেন, জিম্মিদের মুক্ত করার সবচেয়ে ভালো পন্থা হলো লড়াইয়ে বিরতি দেওয়া। পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের ফুরিয়ে যাওয়া অস্ত্রের মজুত বাড়ানো এবং সেনাদের শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে ক্ষমায় রেখে গাজায় যুদ্ধের অবসান হবে না। তিনি বলেছেন, অজ্ঞাত পক্ষ কারা আমি জানি না। কিন্তু এখানে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট করছি: এমনটি হবে না।
তিনি আরও বলেছেন, হামাসকে নির্মূল ও সব জিম্মিদের মুক্তির সব লক্ষ্য অর্জনের পর কেবল আমরা এই যুদ্ধ শেষ করব।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেনাবাহিনী কোনও কিছুর ঘাটতি থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, লক্ষ্য অর্জনের সবকিছু সেনাবাহিনীর রয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি স্বীকার করেছিলেন, গাজায় হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব না। অথচ নেতানিয়াহু যুদ্ধের শুরু থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যের কথা বলে আসছেন।
হাগারি বলেছিলেন, হামাসকে ধ্বংস করা, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ সোজা কথায় জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া। হামাস একটি মত, হামাস একটি দল। এটি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। যারা মনে করেন আমরা হামাসকে নির্মূল করতে পারব তারা ভুল করছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, ইসরায়েলি সরকার যদি বিকল্প খুঁজে না পায় তাহলে গাজা উপত্যকায় হামাসের অস্তিত্ব থাকবে।
ওই সময় নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছিল, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধের একটি লক্ষ্য হিসেবে হামাসের সামরিক ও শাসন করার সক্ষমতা ধ্বংস করাকে বুঝিয়েছে। তবে আইডিএফ এই লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইসরায়েলি টেলিভিশনের খবরেও ওই সময় দাবি করা হয়েছিল, সেনাপ্রধান হারজি হালেভি ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেট প্রধান রনেন বার সম্প্রতি কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় এই যুদ্ধের সূত্রপাত। ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জন বেসামরিক নাগরিক ও সেনাকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে প্রায় ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং উপকূলীয় ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের আলাদা সংখ্যা প্রকাশ করে না। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েল বলেছে, গাজায় তাদের ৩১৭ জন সেনা নিহত হয়েছে এবং অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে তারা হত্যা করেছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.