‘সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করতে আ. লীগ সরকারের ভয় কোথায়?’

ঢাকা প্রতিনিধি: নিরপেক্ষ সরকার ও কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটের ব্যবস্থা করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ভয় কোথায়?’
আজ বুধবার (১ মার্চ) জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রয়াত নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নির্বাচনে যারা জয়লাভ করবে তারা সরকার গঠন করবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকার ভয় পাচ্ছে কেন প্রশ্ন রেখে ড. মঈন খান বলেন, ‘সরকার যদি ভালো কাজ করে, জনগণ তো তাদেরই (আওয়ামী লীগকে) ভোট দিবে, আবার তারা সরকার গঠন করবে। আসলে সরকার জানে তারা ভালো কাজ করেনি। জনগণ তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে, তাদের জনগণ ভোট দেবে না। এই ভয়ে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চাই না।’
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে ফের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে; জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি কেন হয়েছে? সরকার দাবি করে তারা নাকি উন্নয়ন করেছে। আসলে উন্নয়নের অর্থ কি দ্রব্যমূল্যের উন্নয়ন, মূদ্রাস্ফীতি হবে?’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে শুনেছি, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। তার ফলশ্রুতিতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। গত তিন মাসে ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে ১১৪ টাকায় উঠেছে। এর কষাঘাত সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট দেশের ধনী লোকদের কাধে চাপছে না, চাপছে দরিদ্র মানুষের কাধে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যদি বিদ্যুতের দাম পরপর চারবার বাড়ানো হয়, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়, পানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সেই চাপটা প্রতিটি নাগরিকের ওপরে পড়ে। আর এদেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। মেগাপ্রজেক্ট দিয়ে মেগাদুর্নীতি হচ্ছে। সেই দুর্নীতি লুটে নিচ্ছে গুটি কয়েক ধনীক সম্প্রদায়, যারা এই সরকারের সঙ্গে মিলে এক সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এদেশে অর্থনৈতিক লুটপাটের পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এদেশে গুম, খুন হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে বলে রাষ্ট্রবিরোধী এটা তো হতে পারে না। সরকারের সমালোচনা করা বিরোধীদলের দায়িত্ব। সরকার যদি ভুল করে সরকারের সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেই। যেমন আজকে বলছি, সরকার যে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির দাম বাড়াচ্ছে সেটা জনবিরোধী। এটা তো বলা কোনো অপরাধ হতে পারে না। আমরা জানি কেন তারা এই কাজগুলো করছে। তারা করতে বাধ্য হয়েছে। তারা যে গত ১৫ বছর ধরে এদেশের মানুষের পকেট কেটে লুণ্ঠন করেছে, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল নামতে নামতে এমন জায়গায় গেছে আগামী দুই মাসের আমদানি ব্যয় করা যে সঞ্চয় তা বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে কারণে তারা আইএমএফ’র কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে। ভিক্ষা দিয়েছে আইএমএফ অথচ তারা মানুষকে জোর গলায় শোনাচ্ছে আইএমএফ নাকি তাদের অনুরোধে সন্তুুষ্ট হয়ে নাকি টাকা দিয়েছে। এটা তো গর্বের কথা নয়। আইএমএফ’র কাছে মানুষ কখন যায়, যখন যাদের কোষাগার শূন্য হয়ে পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন শূন্য হয়ে পড়ে। তখন তারা আইএমএফ’র কাছে যায়। আইএমএফ যত কঠিন শর্ত দিয়েছে সেই শর্তগুলো সরকার পূরণ করতে বাধ্য হয়েছে। সেই শর্তপূরণ করতে গিয়ে যে আঘাত তা ধনী লোকের ওপর পড়বে না, সেগুলো গিয়ে পড়ছে দরিদ্র মানুষের ওপর। তার ফলশ্রুতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সরকারের সমালোচনা করলে সরকার রেগে যায়। সরকারের অপকর্ম, খারাপ কাজের সমালোচনা করি। আমরা চাই সরকার এই ভুলগুলো সংশোধন করুক, সঠিক পথে আসুক-এটাই আমাদের কামনা।’
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘গত তিন চার মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের দিক থেকে বারবার বলা হচ্ছে, যদি শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়, তাহলে নাকি তারা বিরোধীদলের ওপর ব্যবস্থা নেবে। সরকার একটা উদাহরণও দেখাতে পারবে যে গত চার মাসে একবারের জন্যও আমরা শান্তি ভঙ্গ করছি। অথচ বিভিন্ন স্থানে আমাদের মিছিলে আক্রমণ করে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে উল্টো মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানসহ মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.