সুবর্ণচরে পান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চলে উপকূলীয় মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এর নাম সুবর্ণচর। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।
বিভিন্ন চাষাবাদের পাশাপাশি এখানকার প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা পান চাষও করে থাকে। এই পান চাষে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা।
এটি উপজেলার চরবাটা ও পূর্ব চরবাটা’সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
কৃত্রিম ছায়াঘেরা জায়গায় পানের চাষাবাদ করাকে ‘বরজ’ বলে। এই বরজ তৈরি করার জন্য বাঁশ, বাঁশের কাঠি, পাটকাঠি, গাছের ডাল, সুপারি, খেজুর, নারিকেল গাছের পাতা, কুশ, উলুখড়, সুতার নেট ইত্যাদি স্থানীয় সহজলভ্য দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বর্ষাকালে পান বরজের ছাউনি পাতলা ও শীতকালে ছাউনি ঘন করে দিতে হয়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় লাভের অংশ কম হওয়ায় এই পেশা ছাড়চ্ছেন অনেকে।
গ্রাম থেকে পান জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়। অথচ পানির দামে বিক্রি করতে হয় প্রান্তিক চাষিদের। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, অতিরিক্ত দামে খৈল ও বাঁশের শলা ক্রয়’সহ প্রয়োজনীয় উপকরণের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
পূ্র্ব চরবাটা ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের চাষী তরুণ তালুকদার জানান, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৮৮ সাল থেকে এখনো টিকে রেখেছি এই পান চাষ। এই সমগ্র উপজেলাতে প্রায় ৮ শত থেকে ১ হাজার মানুষ এই চাষ করে থাকে। এতে অনেকে বেশ সাফল্য এনেছে। কিন্তু চলতি বছরে বিশেষ করে আমার এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবং অন্যান্যরাও বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যে কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই সেটি হলো বর্ষা ও শীতকাল এই সময়ে। এই দুই ধাপে আমাদের পানের যে সমস্ত রোগবালই দেখা যায় যেমন গোড়া পচা, লতা পচা, পাতা পচা, ডগা পচা, আগা পোড়া, পাতা পোড়া, পাতা বিবর্ণ হওয়া, পাতায় ফোটা ফোটা দাগ ধরা, পাতা হলুদ হওয়া, লতায় সাদা পচা ইত্যাদি রোগ পানের লতা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কিন্তু আমরা যারা এই পেশার সাথে পুরোই নির্ভরশীল। তারা পানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবুও জিবনের তাগিদে এখনো এই পেশায় চাকা ঘুরাচ্ছি। কিন্তু সামনের দিকে এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে হয়তো এক পর্যায়ে এটি সুবর্ণচর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
একই গ্রামের কৃষক কৃষ্ণ মহন মজুমদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমাদের পান চাষীদেরকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে আমরা ভালো ভাবে এই পেশাটিকে চালিয়ে যেতে পারবো। না হয় লাগাম এমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে অনেক চাষীরা এটি থেকে সরে দাড়াবে বলে অনুভব করছি।
প্রান্তিক অনেক পান চাষিরা জানায়, কিছু অসাধু পাইকার সিন্ডিকেট করে পানের দাম কমিয়েছে। তবে পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা। বর্তমানে বাজারে পানের চাহিদা কম থাকায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না প্রান্তিক চাষিরা। গ্রামীণ জনপদের চাষিদের বিশ্বাস সরকার পান বাজারের অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিলে জীবিকার তাগিতে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে চাষীরা।
তারা আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো অথচ ন্যায্য মূল্য পাই না। পান চাষে খরচের তুলনায় বিক্রি কম। এজন্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তাছাড়া পাশ্ববর্তী জেলা গুলোর পান নোয়াখালীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হওয়ায় সেন্ডিকেটের কারনে সুবর্ণচরের পান জেলাতে বিক্রি করতে বিভিন্ন সমস্যায় স্বীকার হচ্ছি।
ক্রেতা মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এখন খুচরা বাজারে পানের ১ বিড়া মূল্য ২০-২৫ টাকা, বিভিন্ন সময়ে প্রতি বিড়া পানের দাম ২০০-২৫০ টাকারও অধিক মূল্যে ক্রয় করতে হয়। আবার কখনো ৭০-৮০ দামে ক্রয় করি। তবে বিশেষ করে শীত ও বর্ষাকালে গাছে পান বৃদ্ধি হওয়ার চেয়ে নষ্টের সংখ্যা বেঁড়ে যাওয়ায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম একটু বাড়তি থাকে।
চরবাটা খাসেরহাট বাজারের খুচরা পান বিক্রেতাগণ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে বাজারে ১ বিড়া পানের সর্বোচ্চ মূল্য ৫৫-৬০ টাকা। এবং সর্বনিম্ন ১ বিড়া পানের মূল্য ২৫-৩০ টাকা। প্রান্তিক কৃষক থেকে পাইকারি ক্রয়ের উপর নির্ভরকরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে শীতের সময়ে গাছ থেকে পান জ্বরে যাওয়ায় দিন দিন দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: হারুন অর রশিদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সমগ্র উপজেলায় ১২.৫ হেক্টর জমিতে এই পান চাষের আবাদ হয়। এবং প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদেরকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ থেকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ সহ সার্বিকভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, সাধারণত একটি বরজ থেকে ৮-১০ বছর ধরে পানের ভালো ফলন পাওয়া যায়, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে বরজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে মিঠা পানের জন্য দোঁয়াশ মাটি আর বাংলা ও সাঁচি পানের জন্য এঁটেল-দোঁয়াশ মাটিই সর্বোৎকৃষ্ট। পানের গুণগত মান ও ফলনের সাথে মাটির তারতম্য সরাসরি যুক্ত বলে জানিয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নোয়াখালী প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল (শিমুল)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.