সুবর্ণচরে টিআর-কাবিখা প্রকল্পের কোটি টাকা হরিলুট

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: দরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে সরকার টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু সুবর্ণচরে এসব প্রকল্প হয়ে উঠেছে লুটপাটের খনি।
অভিযোগ উঠেছে—প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ না করেই কোটি টাকার বরাদ্দ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুবর্ণচরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা নগদ অর্থ ও ১৮০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পেই হয়নি কোনো কাজ। কোথাও নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে, আবার কোথাও বরাদ্দের পুরো টাকাই আত্মসাৎ হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
‘কাজের বরাদ্দ থেকে অর্ধেক কেটে নেন পিআইও’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কমপক্ষে ২৫-৫০ শতাংশ কেটে নেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। কিছু প্রকল্পের পুরো অর্থই আত্মসাৎ হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
চরবাটা ইউনিয়ন: হাজী নজির আহম্মদ জামে মসজিদের দেয়াল প্লাস্টারের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মাওলা জানান, তাঁরা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি, এলাকাবাসীর অর্থে কাজ সম্পন্ন করেছেন।
একই ইউনিয়নের মৌলভী শরাফত উল্যাহ জামে মসজিদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মসজিদ সভাপতি বিটিসি নিউজকে বলেন, তাঁরা মাত্র দেড় লাখ টাকা পেয়েছেন।
চরক্লার্ক ইউনিয়ন: ইসলামপুর জামে মসজিদের প্লাস্টারের জন্য ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও এখনো ইটের গাঁথুনি চলমান, কাজ শুরুই হয়নি। পাশের ইসলামপুর মার্কেটের দক্ষিণ পাশের  রাস্তার জন্য ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয়রা জানান, গত চার বছরেও সেখানে কোনো সংস্কার হয়নি।
চর আমান উল্যাহ ইউনিয়ন: কুকিজ মার্কেট তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ লাখ টাকা, কিন্তু মাদ্রাসা প্রধান জানেনই না কোনো বরাদ্দের কথা।
চরজব্বার ইউনিয়ন: চরহাসান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা জানেন না।
চরজুবলী ইউনিয়নের চরজুবলী অলিউল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান ইউএনএ মহোদয়কে বলে মাঠ ভরাটের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করানো হলেও কিছুদিন পূর্বে ৪০/৫০ হাজার টাকার মাটি ভরাট করে অবশিষ্ট টাকা ভাগিয়ে নেয়া হয়। পিআইও ককে জানানো হলেও তিনি বলেন এর বেশি কাজ করা যায় না।
একই ইউনিয়নের সুবর্ণচর সদর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, গত কয়েক বছরেও কোন বরাদ্দ আমরা পায়নি। অথচ সংগ্রহকৃত তালিকায় তাদের নামে ২.৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো প্রকল্প তালিকা পাওয়া যায়নি। কোথাও লাগানো হয়নি সাইনবোর্ড। প্রকল্প তালিকা চাইলে পিআইও দফায় দফায় এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ।
সুবর্ণচরের বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বিটিসি নিউজকে বলেন, পটপরিবর্তনের পর তাঁরা ভেবেছিলেন লুটপাট বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে আগের মতোই চলছে দুর্নীতি। হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ প্রকল্পের অর্থ লুট হয়ে যাওয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে তাঁদের মধ্যে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, “সব কাজ ৩০ জুনের আগেই শেষ হয়েছে। কাজ বুঝে নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিকে অর্থ দেওয়া হয়েছে।” দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা বিটিসি নিউজকে বলেন, “এসব প্রকল্প সিপিসি–কমিউনিটি প্রজেক্ট কমিটি বাস্তবায়ন করে থাকে। কাজ হয়নি—এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রমাণ মিললে অর্থ পুনরুদ্ধারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল (শিমুল)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.