সুন্দর ফুটবলের পসরা মেলে কোয়ার্টার-ফাইনালে স্পেন

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: আক্রমণের ঝড়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার মাঝেই, পাল্টা এক দমকা হাওয়ায় ঘর এলোমেলো হওয়ার শঙ্কা জাগল। তাতে অবশ্য একটুও দমে গেল না স্পেন। বরং তেতে উঠল আরও। দাপুটে পারফরম্যান্সে ঘুরে দাঁড়িয়ে, জর্জিয়ার ওপর প্রায় পুরোটা সময় ছড়ি ঘুরিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল।
কোলনে রোববার রাতে ফুটবলপ্রেমীদের চোখ জুড়ানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে স্পেন। শেষ ষোলোর ম্যাচে শুরুতে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ৪-১ গোলে জিতেছে তারা। রদ্রির গোলে প্রথমার্ধেই সমতা ফেরানোর পর দ্বিতীয়ার্ধে বাকি তিন গোল করেন ফাবিয়ান রুইস, নিকো উইলিয়ামস ও দানি ওলমো।
প্রতিপক্ষের ওই আত্মঘাতী গোলটি ছাড়া পুরো ম্যাচে আর কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি জর্জিয়া। গোলের জন্য তাদের চার শটের একটিও ছিল না লক্ষ্যে। যেখানে প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৩৫টি শট নেয় স্পেন, যার ১৩টি ছিল লক্ষ্যে। অনেকগুলো পরিষ্কার সুযোগ নষ্ট না হলে ব্যবধান হতে পারতো আরও বড়।
প্রত্যাশিতভাবেই ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করে স্পেন। পঞ্চম মিনিটে দারুণ সুযোগও পেয়ে যায় তারা। ডান দিক থেকে ছয় গজ বক্সের মুখে বল বাড়ান দানি কারভাহাল। ছুটে এসে স্লাইডে চেষ্টা করেন পেদ্রি; কিন্তু যথেষ্ট জোরে শট নিতে পারেননি তিনি। সহজেই বল নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক।
গ্রুপ পর্বে অসাধারণ সব সেভ করা জর্জিও মামারদাশভিলির নৈপুণ্যে দশম মিনিটে ফের বেঁচে যায় জর্জিয়া। কর্নারে উড়ে আসা বলে কারভাহালের প্রচেষ্টা দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন তিনি।
প্রথম ১৫ মিনিটে প্রায় ৯০ শতাংশ সময় পজেশন ছিল স্পেনের পায়ে। এই সময়ে গোলের জন্য তারা শট নেয় আটট! যার দুটি ছিল লক্ষ্যে।
প্রতিপক্ষের প্রবল এই চাপ সামলে অষ্টাদশ মিনিটে প্রথম প্রতি-আক্রমণ শাণায় জর্জিয়া এবং তা থেকেই এগিয়ে যায় দলটি। ডান দিক থেকে বক্সে সতীর্থকে খুঁজে নিতে দারুণ নিচু ক্রস বাড়ান কাকাবাদজে। পেছনে প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারের কাছে বল যাওয়া রুখতে হাঁটু দিয়ে বল আটকানোর চেষ্টা করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হবাঁন লু নহমাঁ; কিন্তু বল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় জালে।
গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করে জাল অক্ষত রাখা স্পেন আসরে গোল হজম করল এই প্রথম, সেটাও আত্মঘাতী!
ওই গোলের পর আবার শুরু হয় স্পেনের টানা আক্রমণ। তিন মিনিটের মধ্যে তাদের আরও দুটি প্রচেষ্টা ভেস্তে যায় মামারদাশভিলির দেয়ালে। মার্ক কুকুরেইয়ার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে ফেরানোর পর নিকো উইলিয়ামসের শটও ঠেকিয়ে দেন তিনি।
গোলের উদ্দেশ্যে ১৫টি ব্যর্থ শট নেওয়ার পর ১৬ নম্বরে গিয়ে সাফল্যের দেখা পায় স্পেন। উইলিয়ামসের কাটব্যাক বক্সের মুখে পেয়ে নিচু জোরাল শটে দলকে সমতায় ফেরার ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার রদ্রি।
গোল হজমের পর থেকে আরও মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠছিল স্পেন। প্রায় সময়ই তাদের ডিফেন্স লাইন উঠে আসছিল মাঝমাঠ পেরিয়ে। আর ওই কারণেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বিপদে পড়তে যাচ্ছিল তারা। সুযোগ পেয়ে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে শট নেন খাভিচা কাভারাৎসখেলিয়া। গোলরক্ষক উনাই সিমোন এগিয়ে ছিলেন অনেকখানি। তবে কপাল ভালো স্পেনের, লক্ষ্যে ছিল না শট।
এর খানিক পরই এগিয়ে যায় তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। লামিনে ইয়ামালারের দারুণ ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান মামারদাশভিলি; কিন্তু দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি তিনি। ওই বল ধরে আবার আক্রমণ শাণায় স্পেন এবং ডান দিক থেকে ইয়ামালের ক্রস গোলমুখে পেয়ে হেডে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রুইস।
সময়ের সেনসেশন ইয়ামাল ৭৪তম মিনিটে সতীর্থের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে জালে বল পাঠান। কিন্তু তিনি অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। অবশ্য পরের মিনিটেই প্রতি-আক্রমণে তৃতীয় গোল পেয়ে যায় তারা।
প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ সামলে নিজেদের ডি-বক্সের বাইরে থেকে উঁচু করে থ্রু পাস বাড়ান পিএসজি মিডফিল্ডার রুইস। আর বল ধরে এগিয়ে, একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন আথলেতিক বিলবাওয়ের ফরোয়ার্ড উইলিয়ামস।
জর্জিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর সব আশা একরকম শেষ হয়ে যায় ৮৩তম মিনিটে। মিকেল ওইয়ারসাবালের পাস ধরে স্কোরলাইন ৪-১ করেন দানি ওলমো।
শেষ হয় প্রথমবারের মতো মেজর কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে এসেই নকআউট পর্বে ওঠা জর্জিয়ার স্বপ্নযাত্রা।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ তিনবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন ও জার্মানি। রেকর্ডটি একার করে নেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে, সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী শুক্রবার মুখোমুখি হবে দল দুটি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.