সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে সেবার নামে চলছে গ্রাহক হয়রানী ও অত্যাচার ॥ অতিষ্ট গ্রাহক

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে সেবার নামে চলছে গ্রাহক হয়রানী ও অত্যাচার। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসের মাধ্যমে মালামাল পাঠিয়ে সটিকভাবে ও সময়মত আমসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ হচ্ছেনা। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহক। এছাড়া বস্তা সেলাই এর নামেও নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। মানুষকে এক প্রকার জিম্মি করে এসব টাকা নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসে গ্রাহকরা কোন অভিযোগ নিয়ে গেলেও মেলেনা কোন সদুত্তর। অভিযোগে বিপরিতে তারাই নানা অযুহাত দেখিয়ে পাল্টা অভিযোগ কারীকেই হেনস্তা করেন। এমনই অভিযোগ জেলার শত শত গ্রাহকদের। এমনই হয়রানী ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ এর সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, চ্যানেল আই’র জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। তিনি গত ১১ জুন ঢাকার চামেলিবাগ, কচুক্ষেত, তেজগাঁও, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী শাখায় আম বুকিং দেন। আম বুকিং এর মেমো নম্বর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকতে জানিয়ে দেয়াও হয়। স্বাভাবিক নিয়ম মোতাবেক পরের দিন ১২ জুন আমগুলো পৌছে যাওয়ার কথা।

কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় এবং ১২ জুন আমগুলো পৌছানোর কোন সংবাদ বা মোবাইলে ম্যাসেজ না পাওয়ায় কয়েকজন গ্রাহক মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানায়। শেষ পর্যন্ত ১১ জুনের পাঠানো আম নেয়ার জন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ঢাকাস্থ সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ১৪ জুন বিকেলে এবং ১৫ জুন সকালে মেসেজ বা মোবাইল ফোনে জানানো হয়। বুকিং দেয়া আম নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। অন্যথায় আম ঈদের আগে আর পাওয়া যাবে না বলেও গ্রাহককে হুশিয়ারী দেয়া হয়। এমনই চামেলীবাগের গ্রাহক মোঃ বাদল জানান, গত ১১ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পাঠানো ৩০ কেজি আম নেয়ার জন্য ১৪ জুন বিকেল ৪টার দিকে ফোন দেয় সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এবং বলে দেয়া হয় বিকেল ৬টার মধ্যে মাল বুঝে নিতে হবে, না হলে ঈদের ছুটিতে অফিস বন্ধ হয়ে যাবে (মেমো নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৫৫)।

একইভাবে কচুক্ষেতের গ্রাহক মোঃ রাজিব আহমেদকেও ১৪ জুন বিকেল ৪টার দিকে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় বিকেল ৬টার মধ্যে মাল বুঝে নিতে হবে, না হলে ঈদের ছুটিতে অফিস বন্ধ হয়ে যাবে (মেমো নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৫৭)। একইভাবে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ীর গ্রাহক হামিদা বেগম, ১৪ জুন বিকেলে আমের কার্টুন বুঝে নেয়ার জন্য জানানোর কথা (মেমো নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৬০)। এছাড়া অন্যান্য সকল গ্রাহকই আম বুঝে পেয়েছেন, তবে সকল আম পড়ে যাওয়ার পর। অন্যান্য বুকিং মোমো নম্বর, তেজগাঁও-(নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৫৪), চামেলীবাগ (নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৫৮), মতিঝিল দিলখুশা (নম্বর ৭০০৮০০০০১৩২৫৬১)। ঈদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খাওয়ার জন্য কত উৎসুক মন নিয়ে আম পাঠানো হয়েছিল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতা এবং স্বেচ্ছাচারীতার কারণে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

এত গরমের মাঝে ৭২ ঘন্টা বা ৯৬ ঘন্টা কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে বা অফিসে আম ভর্তি কার্টুন পড়ে থাকলে কি আম ভাল থাকে। প্রায় সকল আমই পচে গিয়েছে, ২/৪টি আম কোনভাবে ভাল ছিল। একজন গ্রাহক তো ক্ষোভের সাথে বলেন, আমের কার্টুনটি বাসার নিয়ে আসতেই মন চাইছিল না। পচা আমের কার্টুন নিয়ে কি করবো? অনেক ভেবে চিন্তি টপ টপ করে পচা আমের রস পড়া অবস্থায় কাটুন নিয়ে আসার এসে কার্টুন খুলে দেখলাম, সব আমই পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাত্র ২টি আম কোনভাবে এক কোনে ভাল ছিল। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গ্রাহক সেবার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সেবা যে একেবারেই পাচ্ছে না সেটা নয়, কিন্তু ভরা আম মৌসুমে এভাবে গ্রাহকদের হয়রানী করা বা ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়া, অবশ্যই অপরাধ এবং এর যথাযথ ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন।

এছাড়াও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসে টুকরী বা কার্টুনে বস্তা মোড়ানোর জন্য একটি কার্টুন বা টুকরীতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে ১০ টাকার একটি নাইলনের বস্তা দিয়ে, আর একটু সুতলী দিয়ে সেলাই করে দিয়েই এই পরিমান টাকা নেয়া হচ্ছে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পূর্বের গ্রাহকদের আম হারিয়ে বা চুরি যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল হিসেবে নেয়া পদক্ষেপের কারণে সাধারণ গ্রাহক নিরুপায় হয়েই অনেক বেশী টাকা দিয়ে আম পাঠাচ্ছেন। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এসব অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন বোঝা। আর এসব কার্যক্রম সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসের মধ্যেই চললেও কর্তৃপক্ষ চোখে দেখেও দেখেন না।

কারণ হয়তোবা এই টাকা মধ্যে থেকে একটা অংশ কমিশন হিসেবে স্থানীয় অফিস প্রধান বা অন্যান্য কর্মচারীর কাছে পৌছে যায়। এছাড়াও অনেক গ্রাহকের অভিযোগ রয়েছে মালামাল সঠিকভাবে ও সময়মত না পৌছানোর বিষয়ে। এক সময়ের গ্রাহক সেবার নামে শীর্ষে থাকা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর কিছু অসাধু বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীর কারণে গ্রাহক সেবায় ধ্বস নেমে যাওয়া এবং কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয়ার বিষয়টি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আবার গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্ট সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা করছেন গ্রাহক সাধারণ। এব্যাপারে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসের ইনচার্জ শেখর সরকারের কাছে অভিযোগ ও কারণ জানতে চাইলে, তিনি জানান, আমরা এখান থেকে ১১জুনই বুকিং দেয়া আম বা অন্যান্য মালামাল কাভার্ড ভানে দিয়ে দিয়েছি। ঢাকা অফিস কিভাবে মালামাল ডেলিভারী দিয়েছে বা কেনই বা ৭২ ঘন্টা বা ৯৬ ঘন্টা সময় লেগেছে, সেটা জানতে হবে।

কোনভাবেই ২৪ ঘন্টা বা ৩৬ ঘন্টার বেশী সময় লাগার কথা হয়, কোন কারণে দেরী হয়ে আম নষ্ট হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপুরণ দেয়ার ব্যবস্থা করবে। তিনি বুকিং দেয়া মালের মেমো নম্বর চেয়ে পাঠান। এই প্রতারণা বা হয়রানী অথবা অত্যাচারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস থেকে আম পাঠানো গ্রাহক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জুসহ শত শত ভুক্তভোগী গ্রাহক।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.