বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক:একসঙ্গে দুই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে জাপান। একদিকে রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্ট সুনামির সুউচ্চ ঢেউ দেশটির উপকূলে আছড়ে পড়েছে। অন্যদিকে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তাপমাত্রা। যার ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ১১টা রাশিয়ার পূর্ব কামচাটকা উপদ্বীপে ৮.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর হাওয়াই, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোর জন্য সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।
ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর সুনামির ঢেউ প্রথমে রাশিয়ার কুরিল দ্বীপপুঞ্জ এবং এরপর জাপানের উত্তরের বৃহৎ দ্বীপ হোক্কাইডোতে পৌঁছায়।
জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব জাপানের কুজি বন্দরে আছড়ে পড়া সুনামির ঢেউ ১.৩ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উঠেছে। এদিকে নেমুরো হানাসাকিতেও ৮০ সেন্টিমিটার এবং ইশিনোমাকি বন্দরে ঢেউয়ের উচ্চতা ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জাপানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢেউ ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে এবং সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, সুনামির সতর্কতা পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ধরে স্থায়ী হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির উপকূরীয় এলাকার ১৯ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
সুনামির মধ্যেই জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) দেশটির হিয়োগো শহরে তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
এটি ২০১৮ এবং ২০২০ সালের পূর্ববর্তী রেকর্ডকেও ভেঙে দিয়েছে। প্রাচীন শহর কিওটোতেও ১৮৮০ সালে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
জাপান আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) সতর্ক করেছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে চরম তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ‘হিটস্ট্রোক এড়াতে দয়া করে আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।’
গত কয়েকদিন ধরেই জাপানে তাপমাত্রার পারদ চড়া। চরম আবহাওয়ায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, গত সপ্তাহে ১০ হাজার ৮০৪ জন হিটস্ট্রোকের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়ায় বয়স্ক বাসিন্দারা এই তাপপ্রবাহে বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছেন। জাপান সরকার দেশব্যাপী হিটস্ট্রোক সতর্কতা জারি করেছে।
জাপানের এই তাপপ্রবাহকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রবণতার ধারাবাহিকতা বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিম ইউরোপ তার ইতিহাসে উষ্ণতম জুন মাস পার করেছে, যেখানে স্পেন ও পর্তুগালে তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল।
কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রীএস) এর তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের চরম আবহাওয়া ক্রমশ ঘন ঘন এবং তীব্র হচ্ছে। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.