সিরিয়ায় বনে আগুন দেওয়ায় ২৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কসিরিয়ার বনে আগুন দেওয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ২৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১১ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা এসব তথ্য জানায়। গত বছর ভয়াবহ দাবানলে সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকাপুড়ে গিয়েছিল।
যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের কর্মকাণ্ডে প্রাণহানি, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি, স্থাপনা, কৃষিজমি ও বনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের বদলে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
গত বুধবার (২০ অক্টোবর) দোষীদের সাজা ঘোষিত হয়; কঠোর এই সাজা গত ১০ বছর ধরে দেশটিতে চলা গৃহযুদ্ধের নির্মমতা দেখা মানবাধিকার কর্মীদেরও স্তম্ভিত করে দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিরিয়া বিষয়ক এক গবেষক সারা কাইয়ালি বলেছেন, ‘নিজের ও সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দাবানলে জড়িত থাকার দায়ে ২৪ জনকে ‍মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।’
তিনি জানান, গত বছর সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ছিল আসাদের অনুগত এলাকা। এসব এলাকার লোকজন সামান্য হলেও সরকারের সমালোচনা করতে পারে।
‘গত শরতে আগুন যখন একের পর এক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছিল, বাড়িঘর, ফসল ও বনের ক্ষতি করছিল, অনেকেই তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের ব্যর্থতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদেরর নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন,’ বলেন কাইয়ালি।
২৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দাবানল ও এর ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি যে তার কাছে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে আসাদ সম্ভবত অনুগতদের এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, বলেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আসাদ তার প্রতিবেশী অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগী হয়েছেন, তিনি এমন অনেকের সঙ্গে ফের যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছেন, যারা একসময় তাকে উৎখাত করার চেষ্টায় থাকা বিরোধীদের সহযোগী ছিল।
আসাদ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন; এক দশকে এই দুই শাসকের মধ্যে এটাই সম্ভবত প্রথম ফোনালাপ, বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রঘনিষ্ঠ আরেকজন মোহাম্মদ বিন জায়েদের (এমবিজেড নামেও পরিচিত) সঙ্গেও কথা বলেছেন; আবু ধাবির এই ক্রাউন প্রিন্স সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ডি ফ্যাক্টো’ শাসক।
আসাদ ও এমবিজেডের আলোচনায় ‘ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের’ মধ্যে কীভাবে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায়, তাই প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিষয়ক কোনো প্রতিবেদন না ছাপলেও বনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একটি নিবন্ধ ছেপেছে, যার শিরোনাম হচ্ছে ‘সিরিয়ানদের হৃদয় ভেঙে দেওয়া অপরাধের এক বছর পর’।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, দাবানল চারটি প্রদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকা পুড়িয়েছে, নষ্ট করেছে ৩২ হাজার একর জমির ফসল, কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই কোটি ডলারের কাছাকাছি। দাবানলে ৩৭০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্তদের নাম: পরিচয় জানায়নি সিরিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়; কীভাবে ও কখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তাও বলেনি তারা। মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের বাইরে পাঁচ কিশোরসহ আরও ৯ জন বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে সিরিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়। কিশোরদের দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ড। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.