সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি নাটোরের ঔষুধি গ্রামের অ্যালোভেরার বাজার


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন ঔষুধের গ্রাম বলেই পরিচিত। মাঠের পর মাঠ ঔষুধ আর ভেষজ গাছের সমারোহ। ভেষজ গাছের নামেই পরিচয় ঘটেছে এই জনপদের।

জেলাজুড়ে মাঠে মাঠে যেখানে বিভিন্ন ফসলের আবাদ দেখা যায়, সেখানে ব্যতিক্রম শুধু এই ইউনিয়নটি। অন্তত ১৬টি গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়ির ফসলি জমিতে চাষ হয় ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের অ্যালোভেরা চাষের জ্ঞান থাকায় অন্তত এক হাজার চাষী ৬৫ হেক্টর জমিতে বছরে ১৩১৩০ মেট্রিক টন অ্যালোভেরা উৎপাদন করেন। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হকারনির্ভর শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন চাষীরা। সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

নাটোর শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের ১২টিতে আংশিক ও ৪টি গ্রামে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয় অ্যালোভেরা।

অ্যালোভেরা চাষী জয়নাল আবেদীন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ১৯৯৫ সালে আফাজ উদ্দীন পাগলা নামে এক ব্যক্তি প্রথম অ্যালোভেরা গাছের চারা এনে রোপণ করেন লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া। অ্যালোভেরা পাতার শ্বাস দিয়ে শরবত বানিয়ে বিক্রিও শুরু করেন তিনি।

দ্রুত বর্ধন গাছ দেখে ধীরে ধীরে রোপণ করতে শুরু করেন গ্রামের অন্যরাও। এভাবেই গ্রামটিতে শুরু হয় অ্যালোভেরা চাষ। বর্তমানে কয়েক হাজার পরিবার এ চাষে যুক্ত। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে দাবি তার।

চাষী রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, জমিতে চারা রোপণের তিন মাস পর থেকেই প্রথম তোলা যায় অ্যালোভেরা পাতা।

প্রতি সপ্তাহে একবার করে একটি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। গড়ে ৩টি অ্যালোভেরা পাতার ওজন ১ কেজি। চাহিদা বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা এবং বছরের অন্য সময়ে গড়ে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় অ্যালোভেরা। এত উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখছেন না বলে জানান তিনি। একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের কারণে এ অচলাবস্থা বলে মনে করেন তিনি।

ভেষজ ওষুধ বিক্রেতা মুক্তার আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উৎপাদিত এসব অ্যালোভেরা দ্বারা ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরী করা হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় ওষুধ। তিনি ভেষজ চিকিৎসাকে আরও প্রশারে সরকারের দৃষ্টি প্রত্যাশার কথা জানান।

লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বিশ্বের অনান্য দেশে আয়ুর্বেদি ওষুধ, প্রসাধনীসহ নানা ধরণের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে অ্যালোভেরা বিস্তৃত ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও বাংলাদেশে শরবত ছাড়া কোন কাজে খুব একটা ব্যবহার দেখা যায় না।

ফলে এখনও বড় বেপারি ও শরবত বিক্রেতাদের যৌথ সিন্ডিকেটের বাইরে কোন বাজার গড়ে ওঠেনি। এতে এক প্রকার জিম্মি অ্যালোভেরা চাষীরা। নায্য দাম পেতে এই ইউনিয়নে একটি বাজার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। সেই সাথে চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের সহযোগীতা চেয়েছেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। পাতার রস যকৃত ও পাতার শাঁস ফোঁডার জন্য উপকারী। হাঁপানি ও এলার্জি প্রতিরোধে ঘৃতকুমারী বৈজ্ঞানিকভাবেই কার্যকরী।

তিনি বলেন, অ্যালোভেরা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত ভেষজ চিকিৎসার কাঁচামাল ও ফারমাসিটিক্যাল প্রডাক্টে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে বিজ্ঞান নিভর্র প্রাকৃতিক ওষুধ উৎপাদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন এই ওষুধ গবেষক।

জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অ্যালোভেরাসহ অনান্য ঔষধি কাঁচামালের সিন্ডিকেট ভাঙতে একটি বাজার সৃষ্টিসহ অনান্য সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার কারণে উৎপাদিত এসব অ্যালোভেরার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক।

তাদের দাবি, দ্রুতই এসকল সক্রিয় সিন্ডিকেট ভেঙে উৎপাদিত অ্যালোভেরার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.