সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা, প্রায় ২০০ কোটি টাকার সবজি ও ১২ কোটি টাকার অফ সিজনের তরমুজ এ বছর বাগেরহাট থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি হয়েছে।… দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব
বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা, প্রায় ২০০ কোটি টাকার সবজি ও ১২ কোটি টাকার অফ সিজনের তরমুজ এ বছর বাগেরহাট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশে রপ্তানি হয়েছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মাছের ঘেরের পাড়ে চাষ হচ্ছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি।
প্রতিদিন এসব সবজি যাচ্ছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, বাগেরহাটের নয়টি উপজেলার মধ্যে চিতলমারি, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও বাগেরহাট সদরের ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজির আবাদ করা হয়। এবছরের গ্রীষ্মকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭,৬৫০ হেক্টর সেখানে ৮ হাজার তেরো হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। উৎপাদিত সবজির পরিমাণ ২ লক্ষ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। এইসব সবজি স্থানীয় বাজারে হাটবারে বিক্রয় করা হয়।
এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করেন। কৃষকরা সিন্ডিকেটের কারণে অনেক সময় ন্যায্য মূল্য পান না, হাটের নানান সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও খাজনার পরিমাণ নিয়েও তারা অসন্তুষ্ট।
কৃষক হাফেজ নুরুল ইসলাম ও শেখ মিলন হেসেনসহ অন্যান্য কৃষকরা বলেন, ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ এখন লাভজনক হলেও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আমরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি ও বাজারে পর্যাপ্ত সুবিধা নাই এবং খাজনা অতিরিক্ত। আমরা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অতিরিক্ত খাজনার বিষয়ে সিএন্ডবি বাজারের ইজারাদার মোঃ মাসুমের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খাজনা আদায় করি। বিভিন্ন কৃষক অভিযোগ করে বলেন শীতকালীন সবজি ও চাষ করব তবে এই সিন্ডিকেট ও খাজনার বিষয়টা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদারকি করবেন, যদি তা না করেন তাহলে আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদি আমরা ন্যায্য মূল্য না পাই তাহলে তো আমাদের কৃষি চাষ করা সম্ভব হবে না।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে চিতলমারি, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ঘেরপাড়ে সবজি চাষ হচ্ছে। এ বছর গ্রীষ্মকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন সবজি।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘেরপাড়ের সবজি চাষে মূলত অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। মাছের কারণে কীটনাশক ব্যবহার করা যায় না, ফলে এসব সবজি থাকে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ তন্ময় দত্ত বলেন, সদর উপজেলায় সর্বশেষ গৃষ্মকালীন মৌসুমে ১৭০০ হেক্টন জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এগুলো হলো ঘের পাড়ের এলাকা। আমরা আশা করছি আসন্ন রবি মৌসুমে প্রায় ২হাজার জমিতে সবজির আবাদ হবে। এখান থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই সবজি যাচ্ছে।
এই সবজি সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের সহযোগিতায় সিএন্ডবি ও পোলেরহাট বাজারে ২টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ করার সুযোগ পেয়েছি এতে কৃষকরা অল্প কিছু দিনের জন্য তাদের সবজি সংরক্ষন করতে পারবে এবং যখন সবজির দাম বৃদ্ধিপাবে তখন কৃষকরা এই সবজি বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোতাহার হোসেন জানান, জেলায় এ বছর গ্রীষ্ম কালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৭৬৩ হেক্টর জমি, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে। ঘেরের আইলে লাউ, কুমড়া, শসা, উচ্ছে, করল্লা এই লতা জাতিয় সবজি এখানে ভালো হয়। এবছর দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাগেরহাটে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।
দেশের অন্যান্য স্থানে অতিবৃষ্টির কারনে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি, বাগেরহাটে এখানে যেহেতু ঘেরের পাড় তাই আমাদের চাষীরা এবার খুব ভালো লাভবান হয়েছে। এবছর বাগেরহাট থেকে প্রায় ২শ কোটি টাকার সবজি দেশর বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। এসএম মোতাহার হোসেন, উপ-পরিচালক, খামার বাড়ি, বাগেরহাট তিনি আরো বলেন. এছাড়াও এবছর অফ সিজন তরমুজ যেহেতেু ঘেরের পাড়ে করা যায় এবং কৃষকরা একই রকমের মাচায় এই তরমুজ চাষ হয়। এবছর আমাদের হিসেবে প্রায় ১২কোটি টাকার অফ সিজন তরমুজ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে রপ্তানী করা সম্ভব হয়েছে।
বাজার সিন্ডিকেটের বিষয়ে বাগেরহাট জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, বাজার সিন্ডিকেট বা ফরিয়ার বিষয় সারা বাংলাদেশে কম-বেশি আছে এটা অস্বিকার করার কোন সুযোগ নাই।
তবে বাগেরহাট জেলায় সিন্ডিকেট থাকলেও কোন কৃষক বা ব্যবসায়ী আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তবে যদি নিদির্ষ্ট করে যদি কেউ অভিযোগ করেন সেক্ষেত্রে আমরা সরকারি ভাবে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ভবিষ্যতে যদি আমাদের কাছে কৃষক বা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে কোন অভিযোগ দিতে আসে আমরা অবশ্যই সে বাজার গুলো পরিদর্ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কৃষকদের প্রাপ্য মূল্য নিশ্চিত করা গেলে বাগেরহাটের এসব নিরাপদ সবজি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #