সিইসি’র খুলনা আগমনের আগেই নির্বাচনী পরিবেশ চায় বিএনপি

 

খুলনা ব্যুরো : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রচারণাসহ অন্যান্য নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থ করতে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ বুধবার রাত ৮টা থেকে গণগ্রেফতার অভিযান শুরু করে। রাতভর মহানগরীর পাঁচ থানা ও জেলায় তাদের চালানো অভিযানে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া ১৯ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।

এমন অভিযোগ এনে কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এক বিবৃতিতে বলেন, গত ২৪ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরু থেকে শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসক দলীয় ক্যাডারদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, পাঁচটি প্রচার মাইক ভাংচুরের চেষ্টা ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ইজিবাইক আটকে রাখা, মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা, প্রার্থী এবং ঢাকা থেকে আগত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পথ সভাকে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে। পথ সভার জন্য নির্ধারিত স্থান যুবলীগ কর্মীরা দখলে নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার।

সরকারি দলের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতাকারী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী আবচরনবিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসক-প্রকৌশলী-শিক্ষকদের সাথে প্রকাশ্যে সভা করেছেন অভিযোগ করে মঞ্জু বলেন, তাদেরকে ভুড়িভোজে আপ্যায়িত করেছেন এবং নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন যে সকল শিক্ষক, তাদেরকেও বাধ্য করা হয়েছে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আপত্তি দেওয়ার পরও তাদের এই তৎপরতা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ধানের শীষের পক্ষে নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডে কাজ করা কর্মীদের ওপর চলেছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন মাধ্যমে নানা পন্থায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কথা ছড়ানো হয়েছে যে, ৫ মে’র পরে বিএনপির কোন কর্মীকে আর প্রচারণা কাজে নামতে দেয়া হবেনা।

এরপর বুধবার (২ এপ্রিল) রাত ৮টার পর থেকে মহানগীর পাঁচ থানা এলাকায় গণগ্রেফতার অভিযান শুরু করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
রাত সোয়া ২টার দিকে গ্রেফতার হন মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ। রাত দেড়টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানা পুুলিশ গ্রেফতার করে খুলনা মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারুকে। এর আগে ৩০ এপ্রিল দিনদুপুরে ডিবি পুলিশ নগরীর ব্যস্ততম গল্লামারী এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় বাগেরহাট জেলা যুবদল সভাপতি মেহবুবুল হক কিশোরকে। কিশোর ওই দিন খুলনায় এসে নগরীর রূপসা স্ট্যান্ড রোড এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এলাকায় ফিরছিলেন।

এছাড়া বুধবার দিবাগত রাতভর সকল থানায় অভিযান চলে। দৌলতপুর থানার ৬ নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা আজিজুল খন্দকার ও তার ছেলে আরিফ খন্দকার, তিন নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মিঠু, যুবদল নেতা ফারুক হোসেন সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে।

খালিশপুর থানা পুলিশ যুবদল থানা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সান্টু ও ১৩ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভূট্টোকে গ্রেফতার করার পর তার হাইকোর্ট থেকে নেয়া জামিনের কাগজপত্র নিয়ে থানায় যাওয়া শুকুর ও সুমন নামে দুজনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২১ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আবু তালেব ও বিএনপি কর্মী গাউসকে। এছাড়া ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী নাসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

সোনডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে ১৮ নং ওয়ার্ড যুবদল কর্মী আপনকে।
এছাড়া রূপসা থানার আইচগাতিতে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রেফতার করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলালের ভাই খুলনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তফা উল বারী লাভলু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তুহিন, বিএনপি কর্মী আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমকে। এরপর তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

এছাড়া বুধবার দিবাগত সমস্ত রাত নগরী জুড়ে পুলিশ ও ডিবির অভিযান, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, কর্মীকে বাড়ি না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্য নারী ও শিশুদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার এবং ধানের শীষের পক্ষে কাজ করলে খুব খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল এমপি এবং মাহবুবুল আলম হানিফ দুই বার খুলনায় এসে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছেন। যা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিতাড়িত করার জন্য সর্বাত্মক তৎপর হয়েছে। সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই দুই ব্যক্তির নির্দেশনাতেই পুলিশ প্রশাসন নগরী জুড়ে এমনতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

মেয়রপ্রার্থী মঞ্জু বলেন, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিএনপি খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত আট দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় সমগ্র শহর জুড়ে ধানের শীষের পক্ষে জনতার জোয়ার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা মানুষ আসন্ন নির্বাচনের তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বিএনপির প্রতি ভরসা রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভয়ে ভীত হয়ে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ায়। তারা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন পীড়নের পথ বেছে নেয়।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির দাবি অবিলম্বে পুুলিশ প্রশাসনের অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। শাসক দলীয় প্রার্থীর প্রতিনিয়ত করে চলা নির্বাচনী আচরনবিধি লংঘন বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয় তবে খুলনা বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ নগরবাসীকে সাথে নিয়ে এ বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। ৬ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায় আসবেন। তার আগেই এসব দাবি মেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে খুলনা বিএনপি সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দাবি আদায়ের জন্য কালো পতাকা প্রদর্শণ করবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি জনগনের দল এবং জনগনের স্বার্থেই আমাদের রাজনীতি। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার জনগনের কাছে ফিরিয়ে দিতে আমার খুলনা সিট কর্পোরেশন নির্বাচনের মাঠ কখনোই ছাড়বো না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.