সিংড়ায় ফসলি জমিতে বাড়ছে পুকুর খনন !


নাটোর প্রতিনিধি: শস্য ভাণ্ডারখ্যাত নাটোরের সিংড়ার চলনবিলেআশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পুকুর খনন। আর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক খনন করা পুকুর গিলে খাচ্ছে চলনবিলের ফসলি জমি।
এদিকে পুকুর খননের মাটি ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরযোগে বিক্রিতে নেমেছে একটি চক্র। ফলে পুকুরের মাটি পাকা রাস্তায় পড়ে পিচ্ছিল হয়ে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া ও চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ জনগণ এবং নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক।
অভিযোগ রয়েছে- কথিত সাংবাদিক ও প্রশাসনের কিছু লোককে ম্যানেজ করেই রাতারাতি ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও পাকা রাস্তাগুলো নষ্টে নেমেছে চক্রটি।
গতকাল শুক্রবার সকালে সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াশ-টু-বরগ্রাম পাকা সড়কে দেখা যায়, রাস্তার প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় পুকুর খননের এটেল ও কাঁদামাটি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ জনগণ। আর কিছুটা ভোগান্তি কমাতে লোহার কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ও টেনে মাটি সরাচ্ছে কয়েকজন শ্রমিক। এতে কাঁদামাটির সঙ্গে কার্পেটিং রাস্তার খোয়া ও বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কার্পেটিং পাকা রাস্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ও স্থানীয় অটোভ্যান চালক আব্দুর রাজ্জাক বিটিসি নিউজকে জানান, এখানে বেশ কিছুদিন ধরে আধুনিক মৎস্য প্রকল্প উন্নয়নের নামে পুকুর খনন করে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর মাটি বিক্রয় করছেন ডাহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বদরুদ্দোজা বকুল। এতে রাস্তা নষ্ট বা চলাচলে অসুবিধা হলে সাধারণ জনগণের কী আসে যায়?
গত বৃহম্পতিবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ও ভ্যান চালকদের সমস্যা হলেও ভয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আর দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে প্রশাসনের কেউ আসতে চায় না। এছাড়াও একই ইউনিয়নের বিয়াস চারমাথা এলাকার দক্ষিণ কালীবাড়ির ১ একরের একটি পুরাতন পুকুর এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে খনন করে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রয় করছেন কয়ড়াবাড়ি গ্রামের হাসান আলী ও ভেকু মালিক বাচ্চু মিয়া। ফলে বিয়াস-টু-তাড়াশ-বারুহাস পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছে জনগণ।
ভেকুর মালিক মো. বাচ্চু মিয়া বিটিসি নিউজকে জানান, পুকুরটি স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেনের। তিনি শুধু পুকুরটি খননের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলোর মালিক কয়ড়াবাড়ি গ্রামের হাসান আলীর। তিনিই সব বিষয়ে ম্যানেজ করছেন। তবে তার দাবি সড়কে মাটি পড়ায় রাস্তার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
ডাহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা বকুল বিটিসি নিউজকে জানান, মাটি বিক্রি করা উদ্দেশ্য নয় বরং বহুমুখী কৃষি প্রকল্প ও আধুনিক মাছ চাষের জন্য তিনি পুকুরের সংস্কার কাজ করছেন। আর রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য তার লোক নিয়োগ দেওয়া রয়েছে। তবে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পরিষ্কারের সুযোগ না পাওয়ায় এমন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি সম্পদ সংরক্ষণ করা আমাদের সবার কর্তব্য। মাটি পরিষ্কার করা ছাড়া কী বা বিকল্প আছে। গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থায় এমন অনেক কিছুই আমাদের মেনে নিতে হয়, যা আইনসিদ্ধ নয়। আমি অনিচ্ছাকৃত এ দুর্ভোগের জন্য দুঃখিত।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসান আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, এখন কার্পেটিং কাজের জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এইটুকু রাস্তা নষ্ট হয়ে গেলে আবার সংস্কার কাজে প্রায় ৩ কোটি টাকা লাগবে। কার্পেটিং রাস্তায় এটেল বা কাঁদামাটি পড়লে মারাÍক ক্ষতি। আর পরে যদি সেই মাটি কোদাল দিয়ে তুলে ফেলে দেওয়া হয়, তাতে বিটুমিট উঠে রাস্তা স¤পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এমএম সামিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, শুনেছি পাকা রাস্তার উপরের মাটি সরাতে লোক লাগানো হয়েছে। এরপরও কোনো রাস্তা নষ্ট ও জনগণের চলাচলে ভোগান্তি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.