সিংগাইরে বন্যার পানি দেখানোর কথা বলে শিশু অপহরণ করে হত্যা, গ্রেফতার-৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরে বন্যার পানি দেখানোর কথা বলে আল-আমিন নামের এক শিশুকে অপহরণ করে বিভিন্ন মোবাইল ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল অপহরণকারীরা। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে ওই শিশুকে হত্যা করা হয়। আলোচিত নির্মম এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ জন যুবককে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। 
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।
এ ঘট্নায় আজ শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন,এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিবিআই মানিকগঞ্জ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিংগাইর উপজেলার বড়বাকা এলাকার বহুল আলোচিত শিশু শ্রেণীর ছাত্র আল-আমিন (৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত বাইসাইকেল উদ্ধার করেছে পিবিআই।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে হৃদয় হোসেন (২০) ও সাদ্দাম হোসেন (১৯), নাজমুল হোসেন (১৬) গতকাল শুক্রবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে সিংগাইর থানার বেরুন্ডি গ্রাম থেকে গ্রেফতার হয়।
সংবাদ সম্মেলনের পিবিআই জানায়, গত ২৮ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে শিশু আল-আমিন (৭) তার বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তায় বাইসাইকেল চালানোর জন্য বের হয়। আনুমানিক ১ ঘন্টা পার হলেও আল-আমিন বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মা খোঁজাখুজি শুরু করে।
পরবর্তীতে বাড়ির আশপাশে ও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করে আল-আমিনকে না পেয়ে পরের দিন ভিকটিম আল-আমিনের বাবা শহিদুল ইসলাম সিংগাইর থানায় গিয়ে ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্তে জিডি করেন।
পরে গত ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে বেরুন্ডি গ্রামের চকে টেমা মিয়ার পরিত্যক্ত ভিটায় (কথিত সাপের ভিটায়) গিয়ে খোঁজাখুজি করাকালীন উক্ত ভিটার মাঝখানে বাঁশঝাড়ের মধ্যে ভিকটিমের পরিহিত গেঞ্জির অংশ বিশেষ, প্যান্ট ও মাছির আনাগোনা দেখতে পায়। অতঃপর উক্ত স্থানটিকে সন্দেহ হওয়ায় বাঁশ পাতা সরিয়ে মাটি খোড়া-খুড়ি অবস্থায় সাদা রংয়ের একটি প্লাস্টিকের বস্তা পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত বস্তা  মাটির ভেতর থেকে তুলে কাচি দিয়ে বস্তা কেটে মৃতদেহ বের করলে বাদী শহিদুল ইসলাম (আলামিনের পিতা)  ভিকটিম আল-আমিন এর লাশ শনাক্ত করে।
শিশুর এক আত্মীয় জানান, থানায় জিডি করার পর তাদের কাছে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে পিবিআই মানিকগঞ্জ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তাদের তদন্তে বের হয়ে আসে কয়েকজনের নাম। পরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পিবিআই।
পিবিআই জানায়, আসামীরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করে। ৩ জন প্রথমে এলাকার রুপমের ছেলে রোহান ও তোতা মিয়ার ছেলে রহমদের মধ্যে যে কোনো একজনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু রহম এর বয়স বেশি হওয়ায় তাকে অপহরণের চিন্তা বাদ দেয়। পরে রোহানকে অপহরণের ব্যাপারে তারা ৩ জন একমত হয়।
তাদের মুক্তিপণ আদায়ের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী হৃদয় শিশু পুত্র আল-আমিনকে বন্যার পানি দেখানোর কথা বলে সাপের ভিটায় (বৃহৎ বাঁশঝাড়) নিয়ে যায়। সেখানে নাজমুল আগেই অবস্থান করে।
তারা ২ জন প্রথমে আল-আমিনকে শ্বাসরুদ্ধ করার পর প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে লাশ ঢুকিয়ে ফেলে। আল-আমিনের পরিহিত গেঞ্জি ও প্যান্ট মুক্তিপণ আদায়ের প্রমাণ হিসেবে খুলে রাখে।  আর লাশের বস্তাটি নিকটবর্তী জায়গায় প্রায় হাঁটু পানিতে ডুবিয়ে রেখে একটি মুরগীর লিটারের (বর্জ্য) বস্তা দিয়ে চাপা দেয়।
তখন নাজমুলের ফোন থেকে হৃদয়, সাদ্দামকে ফোন দিয়ে বলে যে, কাজ হয়ে গেছে। ঘটনার পরে আল-আমিনের ব্যবহৃত সাইকেল দিনের বেলায় হৃদয় ও নাজমুল লুকিয়ে রাখে এবং একই দিন দিবাগত রাতে হৃদয়দের বাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
গত ৩০ আগস্ট  সকাল ৬টার দিকে হৃদয় কোদাল নিয়ে সাপের ভিটায় গিয়ে পানি থেকে একাই আল-আমিনের লাশটি তুলে পাশেই শুকনো জায়গায় মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখে। পরিকল্পনামাফিক সাদ্দাম ঘটনার দিন নতুন সিম সংগ্রহ করতে না পারার কারণে আল-আমিনের বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি মো. শহিদুরজ্জামান শহিদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.