সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও দূর্নীতির দায়ে অব্যাহতি প্রাপ্ত সেকেন্দারের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি আনসার সদস্যদের

বিশেষ প্রতিনিধি:  রাজশাহীর তানোর উপজেলা কোম্পানী কমান্ডার মোঃ সেকেন্দার আলীকে সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও দূর্নীতির দায়ে অব্যাহতি প্রদান করেছে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে সেকেন্দারের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আনসার/ভিডিপির সদস্যরা। তার চাকুরীতে প্রদত্ত এসএসসির সার্টিফিকেট জাল প্রমানিত হওয়ায় তাকে উক্ত পদ থেকে লিখিত আদেশের মাধ্যমে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এছাড়াও তার সকল প্রকার ভাতাদি স্থগিত করার লিখিত নির্দেশনাও দেওয়া হয় ওই আদেশ নামায়।

বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, এই জালিয়াত আনসার/ভিডিপির কোম্পানী কমান্ডার সেকেন্দার আলী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম, অত্যাচার, দুর্নীতি এবং সহকারী অনসার/ভিডিপি সদস্যদের অর্থ আত্মসাৎ করেন বিভিন্ন কায়দায়। এক সময় এগুলোর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একে বারে নিরুপায় হয়ে তানোর উপজেলার অসহায় আনসার/ভিডিপির সদস্যরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, তার প্রেক্ষিতেই এ আদেশ দেন কর্তৃপক্ষ।

নিম্নে অভিযোগটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

ররাবর,

মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ (মহাপরিচালক) সদরদপ্তর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী খিলগাঁও, ঢাকা।

বিষয়: উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডারের শৃঙ্খলা বহির্ভূত আচরণ কার্যকলাপ ভূয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে যোগদান প্রসঙ্গে।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, রাজশাহী জেলার অন্তর্গত তানোর উপজেলাধীন, উপজেলা কোম্পানী কমান্ডার মোঃ সেকেন্দার আলী দীর্ঘদিন যাবৎ শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করে আসছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১। উপজেলা কোম্পানী কমান্ডার মোঃ সেকেন্দার আলী নিজ বাসায় নারী ঘটিত বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত থাকে যা স্বীয় স্ত্রী ইউনিয়ন দলনেত্রী মোসাঃ এরিনা বেগম বাধা প্রদানের কারণে প্রথমে তাকে ক্ষুদ্ধহয়ে তার পাজরে কাঠিতে আঘাত হানে। এর ফলে মারাত্মক ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং একাধিকবার বাধা প্রদানে তার স্ত্রীকে একতরফা তালাক প্রদান করেন, যা নারী নির্যাতন এর মধ্যে পড়ে।

২। উপজেলা কোম্পানী কমান্ডার মোঃ সেকেন্দার আলী মাদক ব্যাবসায়ী ও চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত যাহা তানোর থানায় একাধিক মামলা আছে তার নামে।

৩। পূজা নির্বাচন ও বিভিন্ন নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত আনসার, ভিডিপি সদস্য/সদস্যাদের কাছ থেকে ডিউটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য অভিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে বিগত ২০ (বিশ) বছর ধরে টাকা উত্তোলন করে। যাহা আনুমানিক ২০,৫০,০০০/- (বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, উক্ত টাকা দিয়ে সে ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেছ। যা বাধা প্রদান করিলে মোসাঃ মুস্তাকিমা (টি.আই ও) অফিসার মহিউল হককে শারীরিক প্রহর করে তানোর থানার জনসম্মুখে। সে কৌশলে বিভিন্ন অফিসারকে হুমকি দেয়, যার কারণে রাজশাহীর ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় কর্মকর্তা থাকলেও উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডার সেকেন্দার আলীর কথা শুনলে কেউ আর তানোর উপজেলায় আসতে চায় না।

৪। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা কোম্পানী আনসার কমান্ডার হওয়ার জন্য যোগ্যতা এসএসসি সমমান পাশ হতে হবে।  কিন্তু সেকেন্দার আলী এসএসসি পাশ না হওয়া স্বত্তে¡ও সে জাল সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে এসএসসি সমমান পাশ দেখিয়েছেন। এছাড়াও তার ভয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দলনেতা/দলনেত্রীরা কোন করতে পারেনা। পূজা, নির্বাচন ও নিরাপত্তার কাজে সকল লোক যোগান দেন তিনি। চাঁদা নেন এর ফলে প্রতিনিয়ত বাহিনীর কার্যকলাপে সুনাম খুন্ন হচ্ছে। ইতিপূর্বে তাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করলেও তিনি অর্থ নৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার কারনে অর্থ দিয়ে দূর্নীতিকে ধামাচাপা দিয়ে আসছে। এই জন্য আমরা রাজশাহী জেলার অন্তর্গত তানোর উপজেলাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের দলনেতা/ দলনেত্রীসহ সর্বস্তরের আনসার ভিডিপির সদস্যগনণ তার শোষণের স্বীকার।

অতএব, মহোদয় উপযুক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডারকে সরজমিনে তদন্ত করে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণে আপনারর একান্ত মর্জি হয়।

নিবেদক:

তানোর উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা/দলনেত্রীসহ সকল আনসার ভিডিপির সদস্য/সদস্যা বৃন্দু।

সংযুক্তি:

১। জাল সার্টিফিকেট ১কপি ও

পেপার কাটিং ১কপি।

এদিকে সেকেন্দার আলীর স্ত্রী আনসার/ভিডিপির  ইউনিয়ন দলনেত্রী মোসাঃ এরিনা বেগম বলেন, স্বামী সেকেন্দার আলী নিজ বাসায় নারী ঘটিত বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত থাকায় বাধা প্রদান করেছি। সে কারণে আমাকে শারিরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করতে থাকে সেকেন্দার আলী। আমি বর্তমান উপজেলা আনসার ভিডিপির কর্মকর্তাসহ আমাদের ডিপামেন্টের অনেককেই বলেছি কিন্তুক কোন সুরাহা হয়নি। তার এ সকল অনৈতিক কাজে বাধা প্রদান করায় সর্বশেষ সে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাকে অত্যাচার করতে করতে পাজরে কাঠিতে আঘাত করে। এর ফলে কাঠি ভেঙ্গে যায় এবং সুচিকিৎসা না করায় ধিকে ধিকে মারাত্মক ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। তার সাথে আমি দীর্ঘ ২৭/২৮ বছর যাবৎ সাংসার করে আসছি আমার একটি ২৬ বছরের কন্যা সস্তান রয়েছে। তাকে এ সকল অনৈতিক কাজে একাধিকবার বাধা প্রদান করার কারনে সে আমাকে এই অসুস্থ অবস্থায় একতরফা তালাক প্রদান করে। আমি একজন নারী হওয়ার সুবাদে দাবি রেখে সাংবাদিকদের মাধমে বাংলাদেশের স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মমতাময়ী মাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর সুষ্ঠ তদন্ত সহ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

অপরদিকে এই সেকেন্দার আলীর অত্যাচার ও অনৈতিক কাজের জন্য তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন, তানোর উপজেলা আনসার/ভিডিপির সদস্য মোসাঃ নাজমা, মোসাঃ হাবিবা, মোসাঃ রেহেনা, মোসাঃ ময়না, মোঃ কামরুজ্জান, মোঃ উজ্বল, মোঃ হাফিজুর রহমান, মোঃ জিয়াউর, মোঃ আশাদুজ্জামান সহ আনসার/ভিডিপির সকল সদস্যবৃন্দু।

এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা আনসার ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাঃ সেলিনা আক্তার সেকেন্দার আলীকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি এও বলেন সেকেন্দার আলী কোন দিনই সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন না। চলতি বছরের জানুয়ারীতে নিয়োগ পায়েছেন সে বর্তমানে একজন সাধারণত আনসার সদস্য। আমি তানোর উপজেলায় প্রায় ২বছর হোল যোগদান করেছি, সেকেন্দার আলীর বিষয়ে তার স্ত্রী সহ কয়েক জনের কাছে থেকে মৌখিক কিছু ছোট খাটো অভিযোগ পেয়েছি। আর নিয়োগ বানিজ্য এবং অন্যান ঘটনাগুলো আমার আমলে সংঘটিত হয়নি আমি তার কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেইনি, আমি তার সাথে জড়িতও নই বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন।

প্রশাসনিক ভাবে সেকেন্দার আলীর মাদকের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে তানোর থানার সাবেক এক দাপুটে নির্র্ভিক (উপ পুলিশ পরিদর্শক) এস আই মোঃ রুবেল হোসেনের সথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, ততকালীন ২০১৮ সালে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালাম সারের সময়ে আমি সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি সেকেন্দার আলী বিভিন্ন মাদক ব্যাবসায়ীর কাছে থেকে বে-আইনি ভাবে মাসোয়ারা আদায় করছে এবং নিজেও মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত। সে আনসার/ভিডিপির কমান্ডার হওয়ার সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে  মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনায় অংশ নিতো ও অভিযানের  সকল গোপন সংবাদ মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিতো।

তিনি আরো বলেন, সে সময় তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতনা, আমি সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ সেকেন্দার আলীর একান্ত সহযোগী মাদক ব্যাবসায়ী তানোর পৌর সদরের সিন্দুকাই গ্রামের রিয়াজ আলীকে আটক করি। আটকের সময় সুকৌশলে সেকেন্দার আলী পালিয়ে যায়, আমি উক্ত মামলার তদন্তকারী অফিসার (আইও) হিসেবে তাকে পলাতক আসামি দেখিয়ে চার্জশীট প্রদান করি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.