সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে পরমাণু চিকিৎসাসেবা, প্রকল্প ব্যয় ২১৪ কোটি

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: দেশের পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষকে পরমাণু চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে উন্নতমানের এ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এ কাজে মোট ব্যয় হবে ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্স (ইনমাস) মিডফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য:
ইনসাম চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়া হাসপাতালে কিছু নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। রোগীর সেবা কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দেশের উল্লেখিত জেলাসমূহে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে উন্নত পারমাণবিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এসব ইনস্টিটিউটসমূহে রোগ নির্ণয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। পারমাণবিক চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ইনমাসসমূহের চিকিৎসক, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ প্রসারিত করা হবে।
এছাড়া পারমাণবিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্ট ইনমাসসমূহের চিকিৎসক, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ প্রসারিত করা হবে।
প্রধান কার্যক্রম: ১০৩টি বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে। ৬২৮টি স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে। ৭৬৯টি আসবাবপত্র সংগ্রহ ২৩ হাজার ২১৭ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।
প্রকল্পের অনুমোদনের সময় লিখিত বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন নানাবিধ গবেষণা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পরমাণু চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। সাধারণ জনগণকে স্বল্পমূল্যে পরমাণু চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনমাস স্থাপনের মাধ্যমে এ চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, স্থাপিত ইনমাসসমূহে পেটসিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যান্সার, করোনারি আর্টারি ডিজিস, ব্রেইন ডিজঅর্ডার ইত্যাদি; আল্ট্রসাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে যকৃত, পিত্তথলি, কিডনী রোগ, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের রোগ, থাইরয়েড, ব্রেস্ট ও অন্যান্য ক্ষুদ্র অঙ্গের পরীক্ষা, হাত ও পায়ের রক্তনালীর রোগ নির্ণয়, পেটের ধমনির অ্যানুরিজম শনাক্তকরণ, বিএমডি মেশিনের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয়রোগ নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা পরবর্তী উন্নতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়।
এছাড়া রেডিওথেরাপির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে রেডিও আইসোটোপ প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বে পরমাণু চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মাধ্যমে স্থাপিত ইনসামসমূহের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের চাহিদা অনুযায়ী পরমাণু চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া ইনমাসসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করা আবশ্যক। পরমাণু চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের পাশাপাশি ইনমাসসমূহের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি।
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ইনমাসসমূহের চাহিদার আলোকে আধুনিক মানের পেট-সিটি, স্পেক্ট-সিটি, স্পেক্ট, বিএমডি, অটোমেটেড বায়ো অ্যাসে কাউন্টিং সিস্টেম, থাইরয়েড গামা ক্যামেরা, থাইরয়েড আপটেক সিস্টেম, কালার ডপলার, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ডোজ ক্যালিব্রেটর, ইটিটি মেশিন সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ১৪টি ইনমাসের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন দরকার। সেবার মানোন্নয়ন দুটি ধাপে করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও দিনাজপুরে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট মিডফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ায় আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.