সাপের ভয় দূর করতে পথে যুক্তিবাদী সমিতি (ভিডিও)

নদীয়া (ভারত) প্রতিনিধি: বর্ষাকালে চারিদিকে সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে এসে ভিড় করে। বেশ কিছুদিন আগে নবদ্বীপ শহরের প্রাচীন মায়াপুর এলাকায় সাপের কামড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তাতে করে ঐ এলাকায় সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসীরা জানান, তাঁদের পাড়ায় বিষধর সাপের উৎপাত বেড়েছে। পাড়ায় এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সাপ দেখলেই হয়তো তারা মেরে ফেলবে। সাপের আতঙ্ক বা ভয় কাটাতে এবং সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা ও অসচেতনতা রয়েছে তা দূর করতে এলাকার মানুষদের নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখা এক আলোচনা সভা করল।
করোনা বিধিনিষেধ মেনে এবং মুখে মাস্ক পরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পাড়ার পঞ্চাশ ষাট জন মানুষ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং সাপ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন।
তাঁদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস। সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল তা দূর করতে সাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, কোন সাপ বিষধর আর কোনটি বিষহীন, সাপে কাটলে কী  কী সাবধানতা মেনে চলতে হবে সে সমস্ত কিছু বিশদে প্রতিবেশীদের সামনে আলোচনা করা হয়।
সাপে কাটলে সময় নষ্ট না করে এবং ওঝা পীর কবিরাজের কাছে না গিয়ে কাছাকাছি হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তবাদী সমিতির সদস্যরা। তারা জানান, সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে ১০০ মিলিলিটার এ ভি এস (গোখরো ও কেউটের ক্ষেত্রে নিওস্টিগমিন ও অ্যাট্রোপিন সহ)  দিতে হবে।
যত দেরি হবে ততই রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমবে। এই সহজ সত্যিটা এখন অনেকটাই বুঝতে পারছেন এ রাজ্যের মানুষ। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, “আমাদের দেশে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান, বেসরকারি হিসেবে এক লাখেরও অধিক।
কারণ সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও অনেক ভুল ধারণা ও কুসংস্কার রয়েছে। পাশাপাশি সরকারের উদাসীনতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে মানুষ এখনও ওঝা, গুনিন, কবিরাজ, তান্ত্রিক ও মনসা মন্দিরে ছুটে যান সাপের বিষ নামাতে। আর তাতেই বিপত্তি বাড়ে। নানা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শিকার হওয়ার কারণে তাদের প্রাণ সংশয় ঘটে।
সরকারি তরফে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে সাপে কাটা চিকিৎসার আধুনিক পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে এই মৃত্যুহার কমানো যায় অনায়াসে। সরকার দেশের স্বাস্থ্য খাতে  জিডিপি-র খরচ যদি এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তিন শতাংশ করে তবে দেশের সকল মানুষ বিনামূল্যে সঠিক ও আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পেতে পারে।
কিন্তু সরকার তা করছে না। এমবিবিএস সিলেবাসে সাপের কামড়ে চিকিৎসার বিষয়টি ভীষণভাবে অবহেলিত ও উপেক্ষিত। ফলত বহু চিকিৎসক সাপে কাটা রোগী দেখলেই চিকিৎসা করতে ভয় পান, রেফার করে দেন অন্যত্র।
আসুন, আমরা নিজেরা আগে সচেতন হই এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে বাধ্য করি চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সকলের জন্য সমমানের আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ  দিতে।” সাপে কামড়ালে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও প্রয়োজনে যুক্তিবাদী সমিতির সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানানো হয়।
এলাকার স্থানীয় প্রতিবেশীরা বলেন, ”সাপ সম্পর্কে এতদিন যা জানতাম তা সবই ভুল ছিল। যুক্তিবাদী সমিতির আলোচনায় আজ তা জানতে পারলাম। নতুন অনেক কিছু শিখতে পারলাম। আমাদের পাশের গ্রামে এমন আলোচনা সভার আয়োজন করব এবং যুক্তিবাদী সমিতিকে অনুরোধ করব সেখানে গিয়ে সাপ নিয়ে এমন অলোচনা করতে।
আমাদের মনে যে ভয় ছিল তা দূর হল, আমরা অনেক সাহস পেলাম। ধন্যবাদ যুক্তিবাদী সমিতিকে।”
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর নদীয়া (ভারত) প্রতিনিধি গোপাল বিশ্বাস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.