সাতক্ষীরায় বৃষ্টির পানিতে নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষ 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ভাদ্রের বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। যদিও জলাবদ্ধতা সাতক্ষীরাবাসির গা-সওয়া বিষয়। এমনিতেই মৌসুমি বৃষ্টিতে ডুবেছিল সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল। তাতে ভাদ্রের বৃষ্টিতে যেন জীবন ওষ্ঠাগত। এমন পরিস্থিতিতে কোন সুসংবাদ আসেনি আবহাওয়া অফিস থেকে। আবহাওয়া অফিস বলছে বৃষ্টির ধারা সোমবার অবধি চলতে পারে। আবহাওয়া অফিসের ভাষ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সাতক্ষীরায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, যা চলতি বছরে বৃষ্টিপাতের সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত তিনদিন ধরে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। এতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের নিচু এলাকা। এ অবস্থায় বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রের পথে বের হওয়া মানুষ পড়েছেন বেশি বিপাকে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৩৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ইটাগাছা, কামালনগর, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, রইচপুর, কুকরালী রাজারবাগ, বদ্দীপুর কলোনি, মধ্য কাটিয়া, বাকাল, সুলতানপুর, মুনজিতপুর, কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেছে।
বিনেরপোতা গোপিনাথপুর এলাকার আল মামুন সম্রাট বলেন, বিনেরপোতা, গোপীনাথপুর, মাগুরা, তালতলা এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার কবরস্থান পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে রয়েছে। রাস্তাও পানির নিচে ডুবে রয়েছে। যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ। ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার।
সাতক্ষীরা কাটিয়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাত জানান, বৃষ্টির কারণে নিচু সড়কগুলো ডুবে গেছে। নালাগুলো বন্ধ হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হয়নি। বৃষ্টির পানি নালা উপচে সড়কে উঠে গেছে। ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি।
কাটিয়া মাঠপাড়া মাদরাসার শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ দিন দিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। মসজিদে নামাজ হচ্ছে না ঠিকমতো, মাদরাসায় আড়াই মাস ধরে ছাত্ররা আসা-যাওয়া করতে পারছে না। পড়াশোনা বন্ধ। পরীক্ষার পর থেকে আর ক্লাস হয়নি। একটাই কারণ, ঘেরের বেড়িবাঁধ দিয়ে আটকানো পানি। অন্য কোথাও এত ভয়ংকর পরিস্থিতি নেই।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাটিয়া মাঠপাড়া এলাকার রুবিনা খাতুন বলেন, ছেলেপেলে নিয়ে এই পানিতে কষ্ট হচ্ছে। বাজার করতে পারছি না, এছাড়া চুলায়ও পানি। এই পানি প্রায় ছয়-সাত মাস থাকবেই।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমরা বারবারই মানববন্ধন করেছি পানির জন্য কিন্তু এর কোনো ফল পাচ্ছি না। কয়েক দিন আগে কিছু পানি কমেছিল তবে বৃষ্টির কারণে আবার সব ডুবে গেছে। ড্রেন যখন করেছিল তখন বলা হয়েছিল পানি সব খালে গিয়ে পড়বে। কিন্তু শহরের পানি সব আমাদের এদিকে আসে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না, পানিতে ডুবে যাচ্ছি। রান্নাবান্নাও হচ্ছে না, চুলায় পানি।
তিনি আরও বলেন, খাওয়া-দাওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে। চিড়া-মুড়ি খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাদের আনাও খুব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার। কাঁধে করে আনতে হচ্ছে। যদি কোনো ডেলিভারির রোগী থাকে তাহলে আসতে আসতে ডেলিভারি হয়ে যাবে এমন অবস্থা। শুক্রবার মসজিদে নামাজ হয়েছে তারপর আর নামাজ পড়তে পারিনি। এখন ওই উপরে ছোট জায়গায় পড়তে হচ্ছে।
গদাই বিল এলাকার মোহাম্মদ আলী বলেন, দুর্ভোগের কথা কি আর বলব? পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। চুলকানি তো এখনই শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি ভেতরে নোংরা পানি।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরা শহর ও তার আশেপাশের প্রায় প্রায় অর্ধেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে কামালনগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, রসুলপুর, পলাশপোল, কুখরালিসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই মাসের পর মাস এসব এলাকা পানিতে ডুবে ছিল। তারপর ভাদ্র মাসের বৃষ্টি এসব এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। রোজগার করতে না পারায় অনেকের চুলো পর্যন্ত জ্বলছে না।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৩৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বছরে এ জেলায় সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা নেই সেসব এলাকায় দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ বৃষ্টিপাতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ নেই। বৃষ্টিপাতের কারণে কোনো বাঁধে সমস্যা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মো. সেলিম হোসেন #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.